Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আদানির বিদ্যুৎ কি আদৌ দরকার ছিল (২০২৩)

Share on Facebook

লেখক:ড. মারুফ মল্লিক।

আদানির সঙ্গে সরকারের বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির মূল যুক্তি ছিল, বিনা বিনিয়োগে স্বল্পমূল্যে বা স্থানীয় বাজারমূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এর সুবিধা হচ্ছে, বিনিয়োগের ধকল পোহাতে হবে না। ফলে, বড় অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হবে। এই যুক্তি দেখিয়ে ২০১৭ সালে সরকার আদানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০২০ সালে আদানি ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করে। এত দিন এ চুক্তি সম্পর্কে কেউ বিশেষ কিছু জানত না। কিন্তু ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠীর নানা কেলেঙ্কারি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির গোপন চুক্তিটিও ফাঁস হয়ে যায়। ফাঁস হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, সরকার সত্য তথ্য দেয়নি। স্বল্পমূল্যে নয়, বরং স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ আসবে আদানি থেকে। কয়লার দামও বেশি দিতে হবে। এ ছাড়া উৎপাদন না করলেও বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হবে সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার।

অথচ আদানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের সময় দেশে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছিল। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুসারে বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল একবার ১৪ হাজার মেগাওয়াট। সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা না থাকায় প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হয়। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়।

এ ছাড়া আরও ৫ হাজার ৬৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। বাঁশখালী ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট। রামপালের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ৬৫০ মেগাওয়াট। যদিও বাঁশখালী, মাতারবাড়ী ও রামপালের কেন্দ্রগুলো কয়লাভিত্তিক হওয়ায় উৎপাদনে যাওয়া নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা থাকতে পারে। কারণ, ডলার-সংকটে সরকার এ মুহূর্তে কয়লা ও তেল আমদানি করতে পারছে না। কিন্তু উল্লেখিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যখন উৎপাদনে আসবে, তখন ডলার ও কয়লার সংকট না-ও থাকতে পারে। আবার রূপপুরে জ্বালানিসংকট হবে না। তাই এই বিদ্যুৎ আসবেই। ফলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের এখন উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ আছে। সামনে অব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ শতাংশেরও বেশি। এ জন্যই ২০২১ সালে ১০টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলও করেছিল সরকার।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, সক্ষমতা থাকার পরও নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি করা কি খুব জরুরি ছিল? আমাদের বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণসক্ষমতা বিশ্লেষণ করে সহজেই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে আদানির বিদ্যুৎ অপ্রয়োজনীয়। এ বিদ্যুৎ আমদানির কোনো দরকারই ছিল না। দেশে অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়ে কিছু মানুষকে ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার নামে। এখন ভারতের একটি শিল্পগোষ্ঠীকে কিছু ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ সংগ্রহের কথা বলে।

চুক্তির ধারা অনুসারে সরকারের যুক্তি কোনোভাবেই টেকে না। বিনা বিনিয়োগে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার সুযোগ এ চুক্তিতে নেই। আদানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে সরকার সত্য গোপন করে গেছে। আদানির সঙ্গে সরকারের এই চুক্তিকে তাই রাজনৈতিক হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে বা ভারতীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল সংগ্রহ, পরিবহন, উৎপাদন ও সঞ্চালন—কোনো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্বার্থ সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষিত হয়নি।

এই চুক্তিতে কোথাও বাণিজ্যিক ভারসাম্য নেই। চুক্তিতে বলা হয়েছে, কয়লার দাম বাজারমূল্যে পরিশোধ করতে হবে। অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা বা জ্বালানি সরবরাহের সর্বোচ্চ মূল নির্ধারিত থাকে। আদানির সঙ্গে চুক্তিতে এ ধরনের কোনো শর্ত রাখা হয়নি। ফলে, আদানি ইচ্ছেমতো কয়লার মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। রামপাল বা পায়রাসহ অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৪৫ থেকে ২৭০ ডলার দিয়ে কয়লা কেনে। অথচ গোড্ডার জন্য জানুয়ারি মাসের বাজারমূল্য হিসাব করলে কয়লার দাম পড়বে ৩৪৬ ডলার। এ কয়লা আবার আদানির মালিকানাধীন অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেলে কয়লাখনি থেকেই কিনতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় বন্দরে উচ্চমানের ৫৫০০ কিলোক্যালরির কয়লার দাম হচ্ছে ১৩০ ডলারের আশপাশে। আর গোড্ডায় ব্যবহার করা হবে ৪৬০০ কিলোক্যালরির কয়লা। স্বভাবতই এ কয়লার দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু কিনতে হবে উচ্চমানের কয়লা থেকে বেশি দামে।

আদানি তিন দিক থেকে লাভ করবে এ চুক্তি অনুযায়ী। প্রথমত, নিজস্ব কয়লা বিক্রি করে লাভ করবে। আবার বিদ্যুৎ বিক্রি করে লাভের অংশ পুরোটাই নিজেদের পকেটে ঢোকাবে। মার্চ থেকে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রে। কিন্তু সঞ্চালন লাইন স্থাপিত না হওয়ার ওই সময় বিদ্যুৎ পাবে না বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ না পেলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে ১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য ২৫ বছরের করের অর্থ বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। বিস্ময়কর হচ্ছে, আদানি ভারত সরকারের কাছ থেকে করছাড় পেয়েছে। কিন্তু চুক্তিতে আগেভাগেই উল্লেখ থাকায় পুরো সময়েই করের অর্থ বাংলাদেশ সরকারকে পরিশোধ করতে হবে।

এ চুক্তিতে আমাদের জন্য কোনো লাভ নেই। তাই আদানির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পাদিত চুক্তিটিকে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী হিসেবেই বিবেচনা করতে হচ্ছে। এ চুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী কোনো কথা বলতে চাননি; বরং আদানির সঙ্গে আলোচনাকে ‘প্রাইভেট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্টে এ চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সবাই নড়েচড়ে বসেন। এর কোনো কিছুই এখন আর গোপন নেই। চুক্তির অনুলিপি এখন সবার হাতে হাতে।

চুক্তিটি বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যাবে, এটা আর দশটা বাণিজ্যিক চুক্তির মতো স্বাভাবিক চুক্তি নয়। এ চুক্তিকে বরং রাজনৈতিক চুক্তি হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। এ চুক্তি নিয়ে ভারতেও নানা ধরনের সমালোচনা হচ্ছে। প্রথমত, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সঞ্চালন লাইন স্থাপনের বিরোধিতা করে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ৩০ জন কৃষক ও পরিবেশবাদী সংগঠন আদালতে মামলা করেছে। কলকাতার আদলতে সামনে মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা আছে। এ ছাড়া ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, মোদি সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের আদানির বিদ্যুৎ কিনতে চাপ দিয়েছে। উল্লেখ্য, কংগ্রেস আদানি গ্রুপকে মোদির রাজনৈতিক দল বিজেপির মূল পৃষ্ঠপোষক বলে অভিহিত করেছে।

কূটনীতিতে এক দেশ আরেক দেশকে সুবিধা দেওয়ার জন্য অনেক সময় অসম চুক্তি করে থাকে। বিশ্বে এ ধরনের চুক্তির অনেক নজির আছে। এসব চুক্তিতে সাধারণত এক পক্ষ অতিরিক্ত ছাড় দেয়। বিনিময়ে অন্য ক্ষেত্রে সুবিধা আদায় করে। এর আগেও ভারতে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় সরকার রামপাল চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এ চুক্তি নিয়েও অনেক বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও আন্দোলন হয়েছে। রামপাল চুক্তির বিনিময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতে কাছ থেকে অতীতে কী পেয়েছে তা আমরা অনুমান করতে পারি। আদানির সঙ্গে চুক্তির বিনিময়ে সরকার কী পাবে তা আমরা এখনো জানি না।

আদানি চুক্তির পক্ষ আছে প্রকৃতপক্ষে পাঁচটি। বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের জনগণ, ভারত সরকার, ভারতের জনসাধারণ ও আদানি গ্রুপ। এতে লাভবান হবে দুই দেশের সরকার ও আদানি গ্রুপ। কিন্তু লোকসান হবে দুই দেশের জনসাধারণেরই। একপেশে চুক্তির ঘানি টানতে হবে আমাদের। বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে। আর ঝাড়খন্ডের জনসাধারণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কোনোভাবেই উপকৃত হবে না। কিন্তু তাঁরা দূষিত জ্বালানি কয়লা ব্যবহারের কুফল সরাসরি ভোগ করবে। আমাদের সবার উচিত দেশের স্বার্থ ও পরিবেশবিরোধী এই অসম চুক্তি বাতিলের দাবি জোরদার করা।

****ড. মারুফ মল্লিক লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:মার্চ ০৪, ২০২৩

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪,সোমবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ