আজ ১০ই জ্যৈষ্ঠ, আগামীকাল ১১ই জ্যৈষ্ঠ আমাদের জাতীয় কবির ১১৫তম জয়ন্তী, আমাদের প্রতি ক্ষণের, প্রতি সেকেন্ডের কবিকে আমাদের আগাম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আমাদের প্রাণের কবি, আমাদের জাতীয় কবি, আমাদের বিদ্রোহী কবি, আমাদের দুখু মিয়া আমাদের কত নামের কবি, কিন্তু তিনি একজন, অদ্বিতীয়।
বড় অভিমান করে হয়তো কবি লিখেছিলেন –
” তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না,
কোলাহল করি’ সারা দিনমান কারও ধ্যান ভাঙিব না।”
বেশ শক্ত ভাবে বলা যায় আমরা কবির এই অভিমানি কথাকে সত্য হতে দেই নি, কবি আমাদের মাঝে জেগে আছেন। প্রতি ক্ষণে, প্রতি সেকেন্ডে। কবি জেগে আছে আমাদের মনে, প্রিয় গানে, প্রিয় সুরে । কোথায় কবি নেই জেগে নেই !! কবি আমাদের মাঝে জেগে আছেন, জেগে থাকবেন হাজার হাজার বছর ধরে। অনন্ত কাল।
কবি আমাদের শিখিয়েছেন মা কখনও কখনও মিছে কথা বলেন, মা রেগে কথা বলেন।
” হয়নি সকাল, ঘুমো এখন” মা বলবেন রেগে।
বলবো আমি, “আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাকো,”
আমাদের মা তো কখনও কখনও বলেন – দেখিস ঠিক একদিন আমি চলে যাব। আমাদের মা কি কখনও আমাদের ছেড়ে চলে যান ! না, চলে যান না, তেমনি করে আমাদের ছেড়ে কবি চলে যান নি, কবি জেগে আছেন, আমাদের কবি আমাদের মাঝেই।
কোলাহল করে সেই দিনের মত কবি তো আমাদের ধ্যান ভাঙিয়ে চলছেন প্রতি দিনে, প্রতি ক্ষণে । বইয়ের পাতায়, গানে, গবেষনায়, আলোচনায় কবি আমাদের ধ্যান ভাঙিয়ে চলছেন সারাক্ষণ। জাতীয় কবির ১১৫তম জয়ন্তীতে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে নানান আয়োজন। এই সপ্তাহ জুড়েই আমাদের প্রাণের কবি, প্রতি সেকেন্ডের কবি, আমাদের গানের কবি, আমাদের বিদ্রোহী কবিকে নিয়ে হবে আমাদের নানান আলোচনা। তিনি এমনই এক কবি যার জীবন কাহিনী, জীবন দর্শন লিখে শেষ করা যাবে না। তিনি চির-বিস্ময় তিনি সত্যই বিশ্ববিধাতৃর!
নিজেক নিয়ে তিনি ভবিষৎ জেনে বা না জেনে লিখেছিলেন
” ………………..নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।”
তবে কবি নিজ ভবিষ্যৎকে ষ্পষ্ট করে দেখেছিলেন যা অন্য কেউ আর দেখেছিল বলে মনে হয় না। বেশ আগে ভাগেই কবি জেনেছিলেন ১৯৪২ সাল থেকে তিনি থাকবেন ” ” ………………..নিশ্চল নিশ্চুপ”
কবি জানতেন ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ” আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।” নিজে একা একা পুড়বেন গন্ধবিধুর ধূপের মত।
জাতীয় কবিকে আমার দেখা হয় নি কিন্তু যারা কবিকে দেখেছেন, অনেক পড়াশুনা করে অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন সেই সব সৌভাগ্যবানরা কবিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন।
নিজের চোখ দিয়ে প্রিয় কবিকে দেখা হয় নি, কবিকে অনুভব করা হয়েছে। শুধু দেখা হয়েছে কবির ধানমন্ডির বাড়িটি যে বাড়িটিতে তিনি ছিলেন, তৎকালিন পিজি হসপিটাল যেখানে কাটিয়েছেন জীবনের শেষ দিনগুলি আার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে যে শেষ ঠিকানায় তিনি আছেন।
আমাদের রাজধানীর একটি উল্ল্যেখযোগ্য মহা সড়কের নাম কাজী নজরুল ইসলাম এ্যভিনিউ। ২০১২ তে কোলকাতা ভ্রমনের সময় হঠাৎ চোখে পড়ে সেখানেও একটি উল্ল্যেখযোগ্য মহা সড়কের নাম কাজী নজরুল ইসলাম সরণি। বাংলা বিভক্ত হয়েছে সীমান্ত বিভক্তি রেখায়, কিন্তু কাজী নজরুলকে বিভক্ত করা যায় নি। বিভিক্ত করা যায় নি বাঙালীর মন থেকে, প্রাণ থেকে।
সেই ২০১২ তে ভারতীয় রেলে করে যখন পশ্চিম বংগের আসানসোল মহকুমা অতিক্রম করছিলাম তখন সারা মন দেহ শিহরিত হয়ে উঠছিল- এই তো আমার, এই তো আমাদের প্রাণের প্রিয় জাতীয় কবির জন্ম স্থান, মা যেমন সন্তানের সব কিছু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন ঠিক তেমনি ভাবে আসানসোলের মাটি, গাছ, আকাশ, বাতাস নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম, বার বার মনে হয়েছে এখান থেকেই কবি অগ্নিবীণা হাতে নিয়ে এসেছিলেন, ধূমকেতুর মতো প্রকাশে আর বিদ্রোহী রূপে।
আমাদের কবি আছেন মসজিদেরই পাশে আর তিনি মোয়াজ্জিনের আজান নিয়মিত শুনতে পান ।
” মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।।”
তারিখ : মে ২৪, ২০১৩
রেটিং করুনঃ ,