বর্ষা ঋতুর প্রধান মাত্রার মাস শ্রাবণ প্রায় এক মাস আগে বিদায় নিলেও আজ যেন বাংলার আকাশে শ্রাবণের আমন্ত্রণ!! কে বলে আজ শরৎ ঋতুর ভাদ্রের বিদায়ি বার্তা ! আর আশ্বিনের আগমনী বার্তা ! সব মিলে আজকের সকাল ও দিনটি যেন ঘন মেঘের শ্রাবণ বেলা বাদল ঝরা আবহে কেটে যাওয়ার দিন।
রবীন্দ্রনাথের গানে প্রায় দুই মাস আগে আষাঢ় নিয়ে এসেছিল ঘনঘোর বরিষা, খুব ষ্পষ্ট করে যা তাঁর গানে লিখেছেন-
আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে —
আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে ।
এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি
পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি
নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে
আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথের এই বিখ্যাত গানের মত করে আমাদের মাঝে আষাঢ় এসেছিল সুষ্পষ্ট ভাবে বর্ষা ঋতুর জানান দিতে, বর্ষাকে আরও পূর্ণতা দিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন তাঁর গানে-
আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে
দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে,
ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে॥
ধরিত্রী তাঁর অঙ্গনেতে নাচের তালে ওঠেন মেতে, – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বা
এই শ্রাবণ-বেলা বাদল-ঝরা যূথীবনের গন্ধে ভরা ॥
কোন্ ভোলা দিনের বিরহিনী, যেন তারে চিনি চিনি–
ঘন বনের কোণে কোণে ফেরে ছায়ার-ঘোমটা-পরা ॥
কেন বিজন বাটের পানে তাকিয়ে আছি কে তা জানে। – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
সেই শ্রাবণ বিদায় নিলেও আজ আমাদের কাছে আষাঢ় -শ্রাবণের উপস্থিতি ষ্পষ্ট, বাংলায় সজীবতার প্রাণ, শান্তির পরশ। ধরণী তথা প্রকৃতিকে মেঘে ঢেকে রাখা যেখানে আমাদের স্বস্থি মেলে কিছুদিন আগে যে জ্যৈষ্ঠে প্রভাতে সূর্য্য উদয়ের সাথে সাথে আকাশ ঝরানো তাপের দাহ প্রখর আলো জ্বালায় রুদ্র মুখী ধরণী; শুষ্কতায় মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির ফসলের শ্যামল ধরনীতে যেন শ্যামলতাহীন রুক্ষ মরুর পরিবেশ, তখনই আষাঢ় আগমনের প্রস্তুতি, আগমন শান্তির বারতা নিয়ে সেই সাথে বিদায় নেয় ধরণীর তাপ দাহ ও শুষ্কতা।
ঘন কালো মেঘে ঢাকা পরিবেশে আসাদের মনে একটি অস্থির অবস্থানের অবসান ঘটিয়ে মনের মধ্যে নিয়ে আসে স্থিরতা, স্বস্থি আর একটি গম্ভির ভাব, সেই সাথে আকাশে মেঘের খেলায় বর্ষণ-মুখর দিনগুলিতে আমাদের মনে বড় ধরণের বৈচিত্রতা নিয়ে আসে। নানান কথা বলে যায় আমাদের ভীতরের মন আর সে কথাগুলি কেউ প্রকাশ করতে পারে, কেউ তা পারে না অনেকের কলম তখন চলে আষাঢ়ের ধারা।
আষাঢ়- শ্রাবণ আমাদের জীবনের বড় সম্পদ, কৃষি প্রধান দেশ হিসাবে বর্ষা ঋতু আমাদের বলে দেশ তার আগমন ও বর্ষণের মধ্য দিয়ে জানান দিয়ে যায় সামনের মাসগুলিতে আমাদের খাদ্যের মজুত, কৃষকের মুখে কতটা হাসির যোগান !
আষাঢ়- শ্রাবণে বিলানোর মধ্যে কোন কৃপণতা নেই অঢেল সম্পদের দান বিনা হিসাবে, কোন হিসাব না করেই যেখান থেকে পরিপূর্ণ হতে থাকে শুকিয়ে যাওয়া খাল বিল, নদী-নালা আর সেখানে ভেসে চলা পাল তোলা নৌকার দল। বৃক্ষরাজিতে যেন সবুজের মেলা, বনে বাগানে কদম ফুলের মেলা। জ্যৈষ্ঠের রেখে যাওয়া ধূলা-বালি, আবর্জনা তা সবই ধুয়ে মুছে দিয়েছে আষাঢ়।
আষাঢ়ে কৃষক মাঝি যে প্রাণ খুলে গান গায় তা অন্য ঋতুতে বিরল আর আমাদের বিশ্ব করি রবি ঠাকুর সব চেয়ে বেশি গান লিখেছেন বর্ষা ঋতুকে নিয়ে বিশেষ করে আষাঢ়কে নিয়ে।
আষাঢ়ের পরে শ্রাবণ চলে গেলেও আমাদের মনে রেখে যায় কিছু না বলা কথা ! যা রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিখ্যাৎ গানে লিখেছেন –
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়–
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়॥
রবীন্দ্রনাথ সু-স্পষ্ট করে আমাদের বলে যান নি যে কি কথা তারে বলা যায় ! বা কাকে কি বলা যায় !
শ্রাবণ তুমি বিদায় নিলেও আজও তুমি আমাদের বাংলায় মিশে আছো অন্তর মনে আপন সুরে………………………।
তারিখ: সেপ্টম্বর ১০, ২০১৮
রেটিং করুনঃ ,
রবীন্দ্রনাথময় লেখাটি পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম বৈচিত্রে ভরপুর বাংলার ঋৃতুর মাঝে বর্ষাই আলাদা ছাপ রেখে যায় মননে আর মাঠ কাননে। স্বাভাবিক বর্ষণে কাব্যময় হয়ে উঠে ভাবনা আর অতি প্রয়োগে বন্যার মুখামুখি দাড় করায়।
এ বছর বন্যার দাপটে যখন অস্হির জনপথ আর মনন তখন সকাল থেকে আজকের বৃষ্টি উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল।
পোষ্টে +++++
সাধারণ একটি লেখাকে অসাধারণ মন্তব্য দিয়ে লেখাটির মান বাড়িয়ে দিলেন মালেক ভাই, সেই সাথে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।