আজ পয়লা ফাল্গুন। শিমুল-পলাশ-অশোকের শাখায় শাখায় রঙিন ফুলের পসরা সাজিয়ে আর মলিন পাতা ঝরিয়ে আবারও এল ঋতুরাজ বসন্ত। গাছে গাছে ফুলের সমাহার। কোকিলের কুহু কুহু ডাক। টিয়ে, বুলবুলি ও বসন্তবাউরির কলকাকলিতে মুখর চারদিক। গাছের শাখায় নতুন পাতার উদ্গম, যেন নতুন হয়ে উঠছে পুরোনো পৃথিবী। হলুদ আর লাল পোশাকে বাহারি আনন্দে মেতে উঠেছেন তরুণ-তরুণীরাও। ফুলের দোকানে ভিড়। কোথাও নাচগানের উৎসব। করোনার প্রভাবে এবার বসন্তবরণ উৎসবের আমেজ আগের বছরের তুলনায় অনেকটাই কম। তবু থেমে নেই অনেকে। এরই মধ্যে সপরিবারে ঘুরতে বেরিয়েছেন অনেকেই। বাসন্তী রঙের পোশাক ও নানা সাজে ফাগুন আর ভালোবাসার ছোঁয়া লেগেছে তাঁদের। দেশজুড়ে দিনভর চলবে এ বসন্তবরণ উৎসব। দেশজুড়ে বসন্তের পয়লা দিন উদ্যাপনের নানা ছবি তুলে ধরেছেন প্রথম আলোর আলোকচিত্রীরা।
শিমুল-পলাশ-অশোকের শাখায় শাখায় রঙিন ফুলের পসরা সাজিয়ে, ঝরিয়ে দিয়ে মলিন পাতার রাশি ঋতুরাজ বসন্ত এল আবার। আজ শনিবার পয়লা ফাল্গুন। কবিগুরু লিখেছেন, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।/ তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/ কোরো না বিড়ম্বিত তারে।’
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বিদায় নিয়েছে শীত। ঋতুরাজ বসন্ত তার নিজস্ব উষ্ণতায় প্রাণ সঞ্চার করছে প্রকৃতিতে। মাঝে মাঝেই বয়ে যাচ্ছে দমকা হাওয়া। তাতে মিশে আছে মন উচাটন করা কোকিলের কুহু কুহু গান। গাছে গাছে অজস্র ফুলের সমাহার। শাখায় শাখায় নতুন পাতার উদগম, যেন নতুন হয়ে উঠছে পুরোনো পৃথিবী। সে কারণেই যুগে যুগে বসন্ত বিপুল নন্দিত জীবনের জয়গানে।
প্রাণস্পন্দনে জেগে ওঠা প্রকৃতির নীরব উচ্ছ্বাস, বুনো ফুলের গন্ধমাখা দমকা হওয়া, এই চনমনে রোদ, আমের মুকুলে মুকুলে ভ্রমরের গুঞ্জন, বাঙালির হৃদয়ের গভীরেও জাগিয়ে তোলে এক অনির্বচনীয় ব্যাকুলতা। নতুন প্রকৃতির মতোই উজ্জ্বল সাজে সজ্জিত হয়ে পথে নামে পুরবাসী নর-নারী। খুলে যেতে চায় মনের বন্ধ দুয়ার। হৃদয়ের না বলা কথাটি প্রিয়তম কোনো জনের কাছে মধুর স্বরে বলতে আকুল হয়ে ওঠে চিত্ত। হৃদয়ের এ কূল ও কূল দুকূল ভাসানো আবেগের প্লাবনে ঘুচে যায় দ্বিধা-সংকোচ। অনুভূতি পেয়ে যায় তার প্রকাশের ভাষা। বসন্ত তাই ভালোবাসার ঋতু বলেও সমাদর পেয়েছে বাঙালির কাছে।
এই ইটপাথরের কৃত্রিম নগরে বসন্তের লাবণ্যময় স্পর্শ কি লাগে কোথাও? নিসর্গে বসন্তের বর্ণচ্ছটা শহরে তেমন সুলভ নয়। তবে মানবহৃদয় বসন্তের প্রভাব এড়াতে পারে না বলেই হয়তো আজ এই যান্ত্রিক নগরেও দেখা যায় নাগরিকদের বেশভূষায়, উৎসব আয়োজনে ঋতুরাজের আগমনী-উচ্ছ্বাস।
পয়লা ফাল্গুন বা পহেলা ফাল্গুন বাংলা পঞ্জিকার একাদশতম মাস ফাল্গুনের প্রথম দিন ও বসন্তের প্রথম দিন। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ই ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন পালিত হয়। বসন্তকে বরণ করে নেয়ার জন্য বাংলাদেশে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। বাংলাদেশে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ এই দিনকে বরণ করতে চারুকলার বকুলতলায় এবং ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিবছর জাতীয় বসন্ত উৎসব আয়োজন করে।[১] পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে এ দিন বসন্ত উৎসব পালন করা হয়।
বাংলার এই অঞ্চলে, প্রাচীন আমল থেকেই বসন্ত উৎসব পালিত হচ্ছে। হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। হিন্দু বৈষ্ণবরা এটি বেশ আয়োজনের সাথে পালন করে থাকেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব নিয়মিত আয়োজন করে আসছে
সূত্র: প্রথম আলো এবং উইকিপিডিয়া
ছবি থেকে থেকে
তারিখ: ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,