সৌদি আরব এ সপ্তাহে ‘সব ধরনের উড়োজাহাজের জন্য’ নিজেদের আকাশসীমা থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। সৌদির এ ঘোষণা দৃশ্যত ইসরায়েলের প্রতি সম্পর্ক স্থাপনের ইঙ্গিত মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার বলেন, এর সঙ্গে ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের সম্পর্ক নেই। খবর এএফপির
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, ‘এর (আকাশসীমা উন্মুক্ত করে দেওয়া) সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই পরবর্তী পদক্ষেপে কী হতে যাচ্ছে, তার পূর্বাভাস নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদি আরব সফরের আগমুহূর্তে গত শুক্রবার সৌদি আরব ঘোষণা দিয়ে জানায়, সব ধরনের উড়োজাহাজের জন্য রিয়াদ নিজেদের আকাশসীমা থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। এ ঘোষণার পর প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইসরায়েল থেকে সৌদি আরব যান বাইডেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই সৌদি আরবের। এত দিন দেশটির আকাশসীমা ব্যবহার করে ইসরায়েলে চলাচলের ক্ষেত্রে উড়োজাহাজগুলোর ওপর বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু সৌদি আরব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ইসরায়েল থেকে এখন দেশটির উড়োজাহাজ সৌদি আকাশেও চলাচল করতে পারবে।
সৌদির এ সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ মন্তব্য করে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ইসরায়েলের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবের এটি রিয়াদের সর্বশেষ সমঝোতামূলক পদক্ষেপ। তবে আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ইসরায়েলের ব্যাপক তৎপরতা সত্ত্বেও দেশটিকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে সৌদি।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম অ্যাকর্ডের অধীন ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। একই পথ অনুসরণ করে বাহরাইন ও মরক্কো। আঞ্চলিক মিত্রদের এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা না করায় সৌদি আরব ইসরায়েল প্রশ্নে অবস্থান নমনীয় করেছে বলে মনে করা হচ্ছিল।
রাশিয়া, ইরান ও চীনকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না: বাইডেন
সৌদি আরবের জেদ্দায় আজ শনিবার অনুষ্ঠিত মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেন বাইডেন। এ সময় আরব নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে পুরোপুরি নিযুক্ত থাকবে এবং এখানে অন্য বিশ্বশক্তিকে প্রভাব বিস্তার করতে দেবে না।
জো বাইডেন বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে পথ চলব। চীন, রাশিয়া বা ইরানকে পূরণের জন্য কোনো শূন্যতা রাখব না।’ খবর এএফপি ও রয়টার্স
এই অঞ্চলে ইরানের ছড়ি ঘোরানোও পছন্দ হচ্ছে না ওয়াশিংটনের। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাইডেনের সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ইরানকে ‘পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জন’ থেকে বিরত রাখার গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাইডেন তেলসমৃদ্ধ দেশটির নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দৃঢ় ও স্থায়ী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে সৌদি আরব। যার অধীনে ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছিল। সৌদি আরব বলছে, তারা আরব লিগেই থাকতে চায়।
জেদ্দায় এই সম্মেলনের পেছনে বাইডেনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল আরব বিশ্বের সঙ্গে ইসরায়েলকে একীভূত করা এবং ইরানের বিরুদ্ধে আরব বিশ্বের যৌথ পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা। যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই অঞ্চলে যতটা সম্ভব সক্ষমতা যুক্ত করার অসামান্য মূল্য রয়েছে। ইসরায়েলের কাছে প্রয়োজনীয় আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। আমরা এসব নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছি।’
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ১৭, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,