যত দিন যাচ্ছে, পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। অনেক দেশে আবার গণতন্ত্রের ঘোমটায় মুড়ি দিয়ে চলছে কর্তৃত্ববাদ। কোনো কোনো দেশে তো বলেকয়েই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে বাতিল করেছে। দিনের পর দিন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখে মানুষের মাথার ওপর ছড়ি ঘোরানোর প্রবণতা সৃষ্টির শুরু হয়েছে অনেক দেশেই।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স (আইডিইএ) আজ সোমবার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি ২০২১’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বজুড়ে একটি বৃহত্তর সংখ্যক দেশ কর্তৃত্ববাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর আগে কখনো এত বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে পড়তে দেখা যায়নি।
সুইডেনের স্টকহোমভিত্তিক আন্তসরকার সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনতুষ্টিবাদী রাজনীতি, সমালোচকদের থামিয়ে দিতে করোনা মহামারিতে বিধিনিষেধের ব্যবহারকে হাতিয়ার করেছে। এর জন্য অন্যদের গণতন্ত্রবিরোধী আচরণকে নকল করার প্রবণতা এবং সমাজকে বিভক্তকরণে ব্যবহৃত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারই দায়ী।
এদিকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রথমবারের মতো ক্রমাগত নিচের দিকে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ২০১৯ সালে দেশটির গণতন্ত্রে ‘দৃশ্যমান অবনতি’ শুরু হয়।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘এই বছর আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমবারের মতো “ব্যাকস্লাইডিং” হিসেবে দেখিয়েছি। তবে আমাদের তথ্য থেকে বোঝা যায় “ব্যাকস্লাইডিং” পর্বটি ২০১৯ সালের দিকে শুরু হয়েছিল।’
বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ এখন এমন দেশে বাস করছে, যেসব দেশে হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নেই বা গণতান্ত্রিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে
প্রতিবেদনের সহলেখক আলেক্সান্ডার হাডসন আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ চর্চা হয়। ২০২০ সালে নিরপেক্ষ প্রশাসনের (দুর্নীতি এবং পূর্বাভাসযোগ্য প্রয়োগ) সূচকগুলোতে দেশটি উন্নতি করেছে। তবে নাগরিকদের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়াসহ আরও কিছু বিষয় সেখানে গণতন্ত্রের মৌলিক বিষয়গুলোতে ঘাটতি আছে।’
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়, অতীতের চেয়ে অনেক বেশি দেশ ‘গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের’ শিকার হচ্ছে। ১৯৭৫ সাল থেকে সংকলিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ‘গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ’-এর মধ্য দিয়ে যাওয়া দেশের সংখ্যা এত বেশি কখনো ছিল না। সরকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রগুলোতে পশ্চাদপসরণমূলক বাঁকের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়।
উদাহরণ হিসেবে আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক অবস্থা ছাড়াও মিয়ানমারের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয় এতে। বলা হয়, এসব দেশে ইতিমধ্যে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গত বছর মালিতে সেনা অভ্যুত্থানের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে দেখা গেছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে সরকারি নীতির সমালোচকদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে; যা দেশগুলোর গণতন্ত্রের অবনমনেরই ইঙ্গিত করে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও সার্বিয়ায় গণতন্ত্রের সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে। এ ছাড়া ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তুরস্ক তাদের গণতন্ত্রে সবচেয়ে বড় পতন দেখেছে।
বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ এখন এমন দেশে বাস করছে, যেসব দেশে হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নেই বা গণতান্ত্রিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে প্রতি দুজনে একজনের বেশি মানুষ এমন দেশে বাস করছেন, যেখানে গণতন্ত্রের অবনমন ঘটছে। আর প্রতি তিনজনে একজন মানুষ কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করছেন বলে আইডিইএর প্রতিবেদনে বলা হয়।
করোনা মহামারি সরকারগুলোর মধ্যে কর্তৃত্ববাদী আচরণে দিকে নিয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারি মোকাবিলায় কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর সফলতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ব্যতিক্রম শুধু চীন। তাদের দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, তারা করোনা মোকাবিলায় সফল হয়েছে।
সূত্র প্রথম আলো।
তারিখ: নভেম্বর ২২, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,