আইএমএফের শর্ত মেনে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন মার্কেটের আমতলায় রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আয়োজনে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে তিনি ওই মন্তব্য করেন। তিনি ওই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন।
অনুষ্ঠানে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদ অন্তর সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন সদস্যসচিব মো. আমান উল্লাহ। এতে আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ–আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আর রাজী। এ ছাড়া সমাবেশে বক্তব্য দেন আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমিরুল ইসলাম।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই বলে থাকেন, “বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি টাকায় চলে। সরকারের বিরুদ্ধে কীভাবে যাই।” এই কথার মধ্যে আত্মসম্মানবোধহীন ব্যাপার আছে। আবার তথ্যগতভাবেও এটি ভুল। সরকারের টাকা বলে কোনো টাকা নেই। এটা হচ্ছে পাবলিক মানি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি মালিকানা সংগত নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার মধ্যেই আছে, এটা সর্বজনের বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারও সর্বজনের টাকায় চলে। শিক্ষকেরা সর্বজনের টাকায় চলেন। তাই শিক্ষককে সর্বজনের স্বার্থরক্ষা করা দরকার। এই জন্য যদি সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়, তবে সেই শিক্ষককে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। ক্ষমতা, ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। বাণিজ্যিক মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। এটা সহজ কথা।’
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সরকারের একটা পরিকল্পনা আছে। এর মূল কথা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে পুরোপুরি মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে তাঁরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা না করতে পারেন। তাঁদের কাজ এমন যেন না হয় যে সরকারের যে অবস্থান, তা যেন হুমকিতে না পড়ে। সরকার যেটাকে উন্নয়ন বলবে, সেটাকে উন্নয়ন বলা। সরকার যদি বলে এটিই ইতিহাস, এটিই গণতন্ত্র, এটাই নির্বাচন—এগুলো মেনে নিতে হবে। বরং এগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা ওঠা দরকার ছিল। একটা সম্ভাব্য বড় হুমকির জায়গা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং এখানে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মজুরি বাড়ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ নামে বাংলাদেশ সরকারের ওস্তাদ প্রতিষ্ঠান আছে। তারা নানাভাবে সরকারকে দিকনির্দেশনা দেয়, পথ দেখায়। আইএমএফ লোন দিচ্ছে সঙ্গে শর্তও দিচ্ছে। সেগুলো সরকারের মেনে নিতে কোনো সমস্যা নেই। সেগুলোর মধ্যে জিনিসপত্রের দাম, গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। তারা বলছে, সামনে আমরা আরও বাড়াইতেই থাকবে। তারা বাড়ানো না বলে বলে সমন্বয় করা হচ্ছে। এই শব্দটা তারা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে শিখেছে। তারা বলে, ‘আমরা সমন্বয় করব।’ তাদের কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, এটা তো জনগণের ওপরে যাচ্ছে। জিনিসত্রের দাম বাড়ালেও মজুরি বাড়ছে না। মজুরি ছাড়া বাকি সবকিছুর দাম বাড়াতে তারা সব সময় চায়।
অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা আসলে কী হওয়া উচিত। এ জায়গাটায় পুরো বিশ্বকে ধারণ করতে হবে। বিভিন্ন মানুষের মত, চিন্তার বৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং পরিবেশও সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেক হোল্ডাররা কারা, এটা আগে বুঝতে হবে। একটা বিষয়ে, ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সুযোগ থাকতে হবে। অনেকেই মনে করেন, একটা রাকসু আন্দোলন কিংবা নির্বাচন করে দিলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এতেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে না। সাধারণ শিক্ষার্থী বা জনমানুষের নজরদারি দরকার। নইলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি সৃষ্টি হবে না। মানুষের প্রতি মানুষের যে দায়বদ্ধতা, সে বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জানুয়ারী ৩১, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,