মাসখানেকের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিসহ সব ঠিক হয়ে যাবে: পরিকল্পনামন্ত্রী।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নেওয়া প্রকল্পে অর্থায়ন এবং বাজেট ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে মোট সাড়ে ৪ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণসহায়তা চায়। যা দেশীয় মুদ্রায় ৪২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ধরে)। এই প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশ প্রথম কিস্তিতে সংস্থাটির কাছে ১৫০ কোটি ডলার চেয়েছে। এই অর্থ বাংলাদেশের প্রায় ১৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকার সমান। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এফটিডটকমকে (ফিন্যান্সিয়াল টাইমস) এসব কথা বলেন।
এদিকে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশকে মোট কী পরিমাণ ঋণ দেওয়া হতে পারে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানান, বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিসহ অন্যান্য বহুজাতিক ও দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকেও ৪০০ কোটি ডলার চাইছে। দাতাদের কাছ থেকে এসব ঋণ পাওয়ার বিষয়ে তিনি আশাবাদী বলে উল্লেখ করেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশ সফর করে যাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বিদেশি ঋণ প্রসঙ্গে কথা বললেন। ওয়াং ই ১৭ ঘণ্টার এক সংক্ষিপ্ত সফরে গত শনিবার বিকেলে ঢাকা আসেন। পরদিন রোববার বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে এক বিবৃতিতে চীন নিজেকে ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদার’ বলে অভিহিত করেছে। সেই সঙ্গে বলেছে যে উভয় দেশ ‘অবকাঠামোতে সহযোগিতা’জোরদার করতে সম্মত হয়েছে।
অর্থনীতিতে কোভিড–১৯ মহামারির অভিঘাতের পর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক উন্নয়নশীল দেশ চাপে পড়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু দেশ তাদের বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে।
সার্বভৌম ঋণে খেলাপি হওয়া শ্রীলঙ্কা এখন জরুরি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য ঋণ পেতে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ৭০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে ১৩০ কোটি ডলারের তহবিল ছাড়ের বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে গত মাসে প্রাথমিক চুক্তি করেছে। পাকিস্তানের হাতে বর্তমানে যে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে মাত্র দেড় মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে দেশটি।
ক্রমাগত জ্বালানি আমদানির বিল ও জ্বালানি ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং প্রতিদিন বেশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও আঘাত লেগেছে। এর ওপর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৪ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে, যা এক বছর আগে ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
যাহোক, বিশ্লেষকেরা বলছেন যে বাংলাদেশের শক্তিশালী রপ্তানি খাত, বিশেষ করে পোশাক বাণিজ্য সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অভিঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের হাতে এখন যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে প্রায় পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই ভোগান্তিতে পড়েছে, আমরাও চাপের মধ্যে আছি।’ তবে শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে নেই। এমন পরিস্থিতির কথা ভাবারও জো নেই।’
আইএমএফের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল ৬২ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যার বেশির ভাগই বিশ্বব্যাংকের মতো বহুপক্ষীয় ঋণদাতাদের পাওনা। দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৯০০ কোটি ডলার বা ১৫ শতাংশ ঋণ নেওয়া হয়েছে জাপানের রাষ্ট্রীয় ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় এখন প্রায় ২ হাজার ৬০০ ডলার, যা প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।
এদিকে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী সতর্ক মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, চীনের বিআরআই ঋণ নেওয়ার আগে অন্তত দুবার ভাবা উচিত। কারণ, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির মন্থর গতি ঋণগ্রস্ত উদীয়মান দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়ায়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ঋণ গ্রহণের দুর্বল সিদ্ধান্ত ঋণগ্রস্ত দেশগুলোকে সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। সে জন্য চীনকে তাদের দেওয়া ঋণ মূল্যায়নে মনোযোগী হতে হবে। তিনি শ্রীলঙ্কার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, চীনা সহায়তা নেওয়া অবকাঠামো প্রকল্পগুলো কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তা শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট বাড়িয়েছে।
মাসখানেকের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিসহ সব ঠিক হয়ে যাবে: পরিকল্পনামন্ত্রী
বিদ্যুতের সমস্যা, অর্থ ঘাটতিসহ সবকিছু মাসখানেকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে অর্থ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
এম এ মান্নান বলেন, ‘অর্থের ঘাটতিতে পড়ে আমরা কিছুটা অসুবিধায় আছি। এ সমস্যা আমরা তৈরি করিনি। অন্য রাষ্ট্রের তৈরি করা সমস্যা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। গ্রামকে আলোকিত করেছি। এখন বিদ্যুৎ কিছুটা কম পেলেও মাসখানেকের মধ্যে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ তিনি এ জন্য মানুষকে ধৈর্যধারণ করার পরামর্শ দেন।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ:আগষ্ট ০৯, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,