এক বছরের বেশি অপেক্ষা। এত অপেক্ষা করেও স্বপ্ন পূরণ হয়নি আয়োজকদের। অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ধারণক্ষমতার পুরোটা না হলেও দর্শক উপস্থিতিতে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা ছিল আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রধান টমাস বাখ ও টোকিও অলিম্পিকের প্রধান সেইকো হাশিমোতোর। সেটা সম্ভব হয়নি। শূন্য গ্যালারিতেই হলো টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের শুরু হয়েছে একটি ভিডিওর মাধ্যমে। মহামারির সময়টায় অ্যাথলেটরা ঘরে বসে কীভাবে অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, সেটা দেখানো হয়েছে সে ভিডিওতে। দর্শক না থাকলেও আতশবাজির মাধ্যমেই সবাইকে টোকিও অলিম্পিকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
৬৮ হাজার দর্শক ক্ষমতার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে সাধারণ কোনো দর্শক ছিলেন না আজ। বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তা, আয়োজক কমিটি ও ভিআইপি ৯৫০ জন দর্শকেরই সুযোগ মিলেছে স্টেডিয়ামে বসে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার। জাপানের সম্রাট নারুহিতো অলিম্পিকের উদ্বোধন করবেন। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন আছেন।
আর সবকিছুর মতোই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও করোনা মহামারির ছাপ দেখা গেছে। প্রতিবারের মতো অলিম্পিক মার্চে আগের মতো অ্যাথলেটদের ভিড় দেখা যায়নি। সব দেশই নির্বাচিত কিছু অ্যাথলেট পাঠিয়েছে অলিম্পিক মার্চে।
এর মাঝেও যতটা সম্ভব উৎসবের আমেজ আনার চেষ্টা করা হয়েছে। উগান্ডার অ্যাথলেটরা ঐতিহ্যবাহী উজ্জ্বল পোশাক পরে এসেছিলেন। কিছু অ্যাথলেট নেচেও দেখিয়েছেন। আর আর্জেন্টিনার অ্যাথলেটরা মার্চপাস্টের মাঝপথে এসে সবাই মিলে লাফঝাঁপ দিয়ে আনন্দ উল্লাস করেছেন।
কয়েক মাস ধরে নানা জরিপ দেখা গেছে, অলিম্পিক আয়োজনের বিপক্ষে স্থানীয় বাসিন্দারা। টোকিওতে এখনো জরুরি অবস্থা চলছে। কিন্তু একবার বিভিন্ন দেশের অ্যাথলেটরা জাপানে হাজির হতেই ধীরে ধীরে অলিম্পিকের প্রতি আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে। জাপানের বিমানবাহিনীর অলিম্পিক ডিসপ্লে দেখার জন্য হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন আজ। এএফপিকে এক নারী বলেছেন, ‘আমি অলিম্পিককে স্বাগত জানাই। একজন জাপানি হিসেবে আমার গর্বের মুহূর্ত।’
অনুষ্ঠান উদ্বোধনের ছয় ঘণ্টা আগেই স্টেডিয়ামের সামনে হাজির হয়েছিলেন আইকো হিরোতো, ‘কোনো দর্শক থাকার সুযোগ নেই, তবু সবাই এখানে যে পরিবেশ আর আবহ তৈরি করেছেন, তাতে মুগ্ধ আমি। আশা করি, গ্যালারিতে দর্শক না থাকলেও অ্যাথলেটরা যেন বুঝতে পারেন, মানুষ তাঁদের সমর্থন দিচ্ছেন।’
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। আজ শুক্রবার জাপানের রাজধানী টোকিওতে অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁকে এই অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। তিনি ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূস। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শান্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি দিতে ২০১৬ সালে এই অ্যাওয়ার্ডের প্রবর্তন করা হয়।
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান ড. ইউনূস। ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অলিম্পিক লরেল ট্রফি হাতে নিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘অলিম্পিক লরেল পেয়ে আমি সত্যি সম্মানিত এবং অভিভূত। তবে অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে থাকতে না পেরে কষ্ট হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) খেলাধুলার সামাজিক দিকটিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। আপনারা ক্রীড়াবিদেরা বিশ্বকে বদলে দিতে নেতৃত্ব দিতে পারেন। বিশ্বের তিনটি বিষয় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কাজ করতে পারেন আপনারা। কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারেন; দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত করা শূন্যে নামিয়ে আনতে পারেন, সবার মধ্যে উদ্যোক্তার শক্তি ছড়িয়ে দিয়ে বেকারত্বের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। খেলাধুলার মাধ্যমে আরও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে অলিম্পিকের মিশনের সাফল্য কামনা করছি আমি। সবার জন্য শুভকামনা। এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এটি আমার কাছে বিশেষ কিছু। সবাইকে ধন্যবাদ।’
ড. ইউনূসের আগে অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ড পান কেনিয়ার সাবেক ক্রীড়াবিদ কিপশোগে কেইনো। কেনিয়ার শিশুদের জন্য স্কুল, নিরাপদ আবাসন ও খেলাধুলার প্রশিক্ষণ দেওয়ায় তাঁকে এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। কেইনো কেনিয়ার অলিম্পিক কমিটির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুলাই ২৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,