অর্থনৈতিক উচ্ছ্বাসের নিচে কালো ছায়া আছে বলে মন্তব্য করেছেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বিদায়ী অর্থবছরের তথ্য–উপাত্ত এবং বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে মাত্র ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ছোট ও মাঝারি শিল্প খাত ভালো নেই। আয় ও মজুরি কমায় মানুষের ভোগ কমেছে। এর ফলে পিছিয়ে পড়া মানুষের সঙ্গে আরও মানুষ যুক্ত হওয়ার চাপ বাড়ছে।
আজ রোববার ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২১ বাস্তবায়ন: পিছিয়ে পড়া মানুষেরা কীভাবে সুফল পাবে’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। অনলাইনে এই ব্রিফিং হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য সুলতানা কামাল।
এ মুহূর্তে অর্থনীতির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এগুলো হলো গণটিকা কর্মসূচি, প্রণোদনা প্যাকেজ ও মূল্যস্ফীতি। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘রেমিট্যান্সের জাদু শেষ হতে চলেছে। বিদেশে মানুষ কম গেছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। গত জুলাই মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে। এটা কি একটি পূর্বাভাস? কারণ, কর্মসংস্থান ও ভোগের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
দেবপ্রিয় আরও বলেন, বাজেটে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য আর্থিক ও খাদ্য সহায়তায় বরাদ্দ কম। এই বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া তাদের গণটিকা কর্মসূচির আওতায় আনতে বেসরকারি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য সুলতানা কামাল বলেন, ‘আশা করেছিলাম এবার পুনরুদ্ধারের বাজেট হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তেমন কিছু নেই।’
কোভিড পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজাতে একটি স্বাস্থ্য কমিশন গঠনের সুপারিশ করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য ও স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ মুশতাক রাজা চৌধুরী।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, শিক্ষকদের টিকার আওতার আনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কত শতাংশ শিক্ষক টিকা পেলেন, তা তদারকিতে আনতে হবে। কারণ, সব শিক্ষককে টিকার আওতায় আনতে না পারলে কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাজেটের অর্ধেক বরাদ্দ হলো সরকারি কেনাকাটা। সরকারি ক্রয় খাত রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।
কোভিডের কারণে গরিব পরিবারের আয় কমেছে, তারা আরও গরিব হয়েছে বলে মনে করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, প্রবৃদ্ধির ধরন দেখলে বোঝা যায় বৈষম্য বাড়ছে। প্রবৃদ্ধিতে স্বল্প আয়ের মানুষের অংশগ্রহণ কমেছে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ছোট ও মাঝারি শিল্প মাসের পর মাস পরিচালনায় নেই, যা কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: আগষ্ট ০৮, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,