Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

অর্থনীতি কোন পথে: মন্দা, না অন্য কিছু! (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:শওকত হোসেন ঢাকা।

জলে কুমির ডাঙায় বাঘ—এককথায় এটাই এখন বিশ্ব অর্থনীতির চিত্র। আর এ কারণেই অর্থনীতি এখন কোন পথে যাচ্ছে, এর উত্তর দেওয়াটা সহজ নয়। যদিও এর ওপরেই অনেকটাই নির্ভর করছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ।

অর্থনীতিকে কোন পথে যেতে হবে, এটা নিয়ে নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও আছে নানা মত। তবে সবাই একমত যে সামনের সম্ভাব্য প্রতিটি পথই খারাপ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কুৎসিত। পথ মূলত তিনটি—উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বদ্ধ স্ফীতি বা স্ট্যাগফ্লেশন এবং রিসেশন বা মন্দা। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস গত মাসে বলেছেন, বেশির ভাগ দেশই মন্দার দিকে। এমনকি বিশ্বে ১৯৭০ দশকের সেই স্ট্যাগফ্লেশনও ফিরে আসতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা গত সপ্তাহেই বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন ও আরও অনিশ্চিত। সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে, অর্থনীতি কি মন্দার পথে, নাকি ফিরে আসছে স্ট্যাগফ্লেশন। আর মন্দা হলে সেটি কবে থেকে?

দ্য গ্রেট ইনফ্লেশন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিল। সে সময় উৎপাদন বাড়ে, কমে যায় বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতিও ছিল অনেক কম, ১ শতাংশের ঘরে। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যায় ১৯৬৫ সাল থেকে। বাড়তে থাকে বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি। এই পরিস্থিতি ছিল ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। ১৯৮০ সালে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। এ সময়কেই বলা হয় দ্য গ্রেট ইনফ্লেশন। এর মধ্যেই অভিজ্ঞতা হয় স্ট্যাগফ্লেশনেরও।

মূলত এর পর থেকেই একটি আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা কী হবে, নির্ধারিত হয়ে যায়। তখনই ঠিক হয় যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম কাজ। সেভাবেই ভূমিকা পালন করে আসছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড। উন্নত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে আসছে।

১৯৮১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন রোনাল্ড রিগ্যান। সে সময়ের মূল্যস্ফীতি দেখেই তিনি সেই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘মূল্যস্ফীতি হচ্ছে ছিনতাইকারীর মতো হিংস্র, সশস্ত্র ডাকাতের মতো ভয়ংকর এবং খুনির মতোই প্রাণঘাতী।’ উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে বাঁচতে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক কৌশল হিসেবে অর্থনৈতিক মন্দাকে বেছে নিয়েছিল। মার্কিন ফেড মুদ্রা সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়, বাড়ায় নীতিনির্ধারণী সুদহার। তাতে কমে যায় উৎপাদন। মানুষের হাতে নগদ অর্থও হ্রাস পায়। এতে কমে চাহিদা। ফল হিসেবে ১৯৮৫ সালে মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছিল সাড়ে ৩ শতাংশে।

আবার সেই মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি এখন ৯ দশমিক ১ শতাংশ, যা ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ সেই আশির দশকের উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরে এটাই সর্বোচ্চ। এবারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেড চলতি বছরে এখন পর্যন্ত চারবার সুদের হার বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে মুদ্রা সরবরাহ কমাতে চায় তারা। মূলত কোভিড-১৯–এর দুই বছরে চাহিদা ঠিক রাখতে মানুষের হাতে অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই অর্থই তারা ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে।

সারা বিশ্বই মূলত তাকিয়ে থাকে ফেডের দিকে। সুদহার বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত সবার জন্যই একটি সংকেত। তা ছাড়া প্রায় সব দেশই উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে আছে, তাই সবাই অনুসরণ করছে ফেডকে। ফেডের চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল বলেছেন, মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত তাঁরা সুদহার বাড়িয়েই যাবেন। এখন অনেকেরই আশঙ্কা, ফেডের এই নীতিই আসলে মন্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতিকে।
মন্দা কি অপরিহার্য

যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (এনবিইআর) নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদসহ নানা পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কাজ অর্থনীতির বাণিজ্যচক্র বিশ্লেষণ করা। মূলত তারাই বলে দেয় কখন অর্থনীতির মন্দা শুরু আর কখন শেষ। সাধারণত পর পর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকেই মন্দা বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে পরপর দুই প্রান্তিকেই অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। এখনো মন্দার ঘোষণা আসেনি। তবে মন্দা যে আসছে, তাতে সবাই কমবেশি একমত।

ব্লুমবার্গের অর্থনৈতিক মডেল বলছে, ২০২৪ সালে মন্দা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। জার্মানির ডয়চে ব্যাংকের অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, মন্দা দেখা দেবে ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলস ফারগো অ্যান্ড কোম্পানির মতে, মন্দা হবে ২০২৩ সালের শুরুতে আর জাপানের আর্থিক কোম্পানি নমুরা হোল্ডিং বলছে, মন্দা দেখা দেবে চলতি ২০২২-এর শেষ দিকেই।

আশির দশকে ফেড মন্দাকে বরণ করে নিয়েছিল। তবে এবার ফেডের চেষ্টা হচ্ছে মন্দায় না ঢুকেই মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। কেননা, মন্দা দেখা দিলে উৎপাদন কমবে, কর্মসংস্থান কমবে, মানুষের আয়ও কমে যাবে। এই পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য মোটেই সুখকর নয়। যদিও মার্কিন অর্থনীতির জন্য মন্দা মোটেই নতুন কিছু নয়। বার্তা সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮৫৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন অর্থনীতিতে ৩৪ বার মন্দা দেখা দিয়েছিল। এর অর্থ প্রতি পাঁচ বছর পরপর মন্দা দেখা দেয় আর গড়ে এর স্থায়িত্ব ১৭ মাস। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ মন্দার কবলে পড়লে এর প্রভাব পড়বে সারা বিশ্বে। কেননা চীনের অর্থনীতিও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপ পড়ে আছে তীব্র জ্বালানিসংকটে।
মন্দার চেয়েও যা কুৎসিত

মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে এখন সবাই সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এতেও যদি কাজ না হয়? যদি এমন হয় যে মূল্যস্ফীতি মোটেই কমল না, বরং সংকুচিত হলো অর্থনীতি। এ পরিস্থিতিকেই বলা হয় স্ট্যাগফ্লেশন। অর্থাৎ ‘ইনফ্লেশন’ ও ‘রিসেশন’-এর মিশ্রণ, যা দেখা দিয়েছিল ১৯৭০–এর দশকে। ওই সময়ে সৌদি আরব ও অন্য তেল উৎপাদানকারী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থক দেশগুলোর কাছে জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে এসব দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। উৎপাদনও হ্রাস পায়। একটা পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৯ শতাংশ আর মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৫ শতাংশ। এটাই সেই কুখ্যাত স্ট্যাগফ্লেশন, যাকে অনেকেই সবচেয়ে কুৎসিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বলে মনে করেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে

বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর মন্দা বা স্ট্যাগফ্লেশন নির্ভর করে না। বরং বিশ্ব অর্থনীতিতে তা দেখা দিলে বাংলাদেশকেও মেনে নিতে হবে। সুতরাং এর অভিঘাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় বা কৌশল ঠিক করাই হবে প্রধান কাজ। মার্কিন অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, তাঁরা আসলে ২০২১ সালে অতিরিক্ত খরচ করে ফেলেছেন। সুতরাং খরচ কমাতে হবে। বাংলাদেশও প্রণোদনা হিসেবে কম সুদে ঋণ দিয়েছে। সহজে পাওয়া এসব ঋণের একটি অংশ খেলাপি হয়ে গেছে, অর্থাৎ উৎপাদনে ব্যবহার হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহারও নির্দিষ্ট করে রেখেছে। যদিও সুদহারের ওপর বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নির্ভর করে, তা অনেকেই বিশ্বাস করেন না। বরং ব্যাংকঋণ সস্তা হলে খেলাপি ঋণ বাড়ে। আর মুদ্রানীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এমনটাও দেখা যায়নি।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মূলত রাজস্ব নীতির ওপরেই বেশি ভর করছে। এর আওতায় শুল্ক বাড়ানোর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে কিছু বিলাসী পণ্যের আমদানি কমেছে ঠিকই, তা উল্লেখযোগ্য নয়। এ ছাড়া বেশ কিছু সাশ্রয় পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। যদিও অর্থনৈতিক তত্ত্ব বলে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্বনীতি নয়, মুদ্রানীতিই বেশি কার্যকর। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপ কমাতে সরকার আইএমএফের কাছে ঋণসহায়তা পেতে চিঠি দিয়েছে।

এ অবস্থায় অর্থনীতির চাপ সামলাতে আগামী দিনগুলোয় সরকারকে গভীর মনোযোগ রাখতে হবে বিশ্ব অর্থনীতির দিকে। পণ্যমূল্য কমতে শুরু হলেও তা অর্থনীতির মন্দার লক্ষণ। তৈরি পোশাক খাতও ক্রয়াদেশ আগের তুলনায় কম পাচ্ছে। প্রবাসী আয় আগের মতো আসছে না। সুতরাং এ বিষয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা ও ঋণ পাওয়ার শর্ত নির্ধারণ করা। শর্তের মধ্যে যদি থাকে জ্বালানির দাম বাড়ানো, ভর্তুকি কমানো, তাহলে তা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে, সীমিত আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হবে। অন্যদিকে করব্যবস্থা ও আর্থিক খাত নিয়ে বড় ধরনের সংস্কার অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে বাধা আসবে প্রভাবশালীদের দিক থেকে। সুতরাং বিশ্ব অর্থনীতির অভিঘাত থেকে দেশের অর্থনীতিকে কতটুকু রক্ষা করা যাবে, তা পুরোটাই নির্ভর করছে দেশের মধ্যে নীতিনির্ধারকদের ওপর। অর্থনীতির কঠিন এই সময়েও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না সরকার। সুতরাং মাঠের খেলোয়াড় একমাত্র সরকারই।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ০১, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ