Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

অর্থনীতির সংকটে জনসভার স্থানের জন্য প্রাণহানি (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:কামাল আহমেদ।

আপনি যখন লেখাটা পড়ছেন, তার ঠিক ১৩৭ দিন আগের একটি খবরের শিরোনাম ছিল, ‘কার্যালয় ঘেরাও করতে এলে বিএনপিকে চা খাওয়াবেন প্রধানমন্ত্রী’। গত ২৩ জুলাইয়ের সে খবরটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছিল এভাবে, ‘বাংলামোটরে যে বাধা দেওয়া, সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। আসুক না হেঁটে হেঁটে যত দূর আসতে পারে। কোনো আপত্তি নেই। আমি বসাব, চা খাওয়াব। কথা বলতে চাইলে শুনব।’ বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও তো দূরের কথা নিজেদের কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েই এখন বিপদে। এখন সেখানে তাদের সমাবেশ করা তো দূরের কথা, দাঁড়াতেও দেওয়া হবে না বলে সরকারিভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও র‍্যাবের তরফেও বলা হয়েছে, অননুমোদিত কোনো কিছু ঘটতে না দিতে তারা পুরোপুরি প্রস্তুত আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও বলেছেন পাড়ায়-মহল্লায় তাঁরা রাস্তায় থাকবেন এবং বেশ কয়েকটি সমাবেশেরও আয়োজন করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটের কালে রাজনীতির বদলে জনসভার জায়গা নিয়ে বিবাদ ও আতঙ্ক সৃষ্টির এক নতুন নজির তৈরি হচ্ছে। জনসমাবেশের তিন দিন আগেই দলীয় কার্যালয় ঘিরে তাণ্ডব ও মর্মান্তিক মৃত্যু দেখতে হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়।

পুলিশ বিএনপিকে মাইক ব্যবহার করে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে বলে জানালেও জানা গেল জনসভার স্থান হতে হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং তার জন্য উদ্যান কর্তৃপক্ষের আলাদা অনুমতি লাগবে। জায়গার সিদ্ধান্ত ছাড়াই সমাবেশের অনুমতির অর্থ কী, সেটা বোঝা ভার। জায়গা নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন তৈরি হলে রাজনীতিতে উত্তাপ তৈরি হবে, একটা সম্ভাব্য শক্তি পরীক্ষার লড়াইয়ের জন্য সাজ সাজ রব উঠবে, সেটা কি পুলিশ কর্তাদের জানা ছিল না? অনুমতির জন্য যে ২৬ দফা শর্ত দেওয়া হলো, সেগুলোরই-বা উৎস কী? স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানি শাসন কিংবা স্বাধীনতার পর সামরিক-বেসামরিক কোনো আমলেই তো এত শর্তের কথা কেউ শোনেনি।

জনসভার জায়গার কথায় ফেরা যাক। ৩২ বছর আগে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের অবসান ঘটাতে সব রাজনৈতিক দল যে জাতীয় রূপরেখা তৈরির করেছিল, তিনটি জোট তা ঢাকায় একযোগে তিনটি আলাদা জনসভায় ঘোষণা করেছিল। ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বরের ওই তিনটি জনসভার স্থান ছিল এক বর্গ কিলোমিটারেরও কম এলাকার মধ্যে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৫ দল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোট ফুলবাড়িয়ায় এবং পাঁচ দল তোপখানায়। ঢাকায় তখন আরও যেসব জায়গায় জনসমাবেশ হতো, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—আউটার স্টেডিয়াম, বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেট, দৈনিক বাংলার মোড়, শাপলা চত্বর, নয়াবাজার, নবাবপুর রোড ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। কেন্দ্রীয় ডাকঘরের পাশে একটা কথিত মুক্তমঞ্চও ছিল। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছোটখাটো সমাবেশ ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার, যেগুলোকে সাধারণত কেউ জনসভা বলত না।

আর মহাসমাবেশ বা অনেক বড় সমাবেশের ইচ্ছা থাকলে, সেটি হতো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। মিরপুর রোড ও এয়ারপোর্ট রোডের মধ্যে বিকল্প সংযোগ কাছাকাছি থাকায় সীমিত আকারের যানজটকে তখন সহনীয় বলে বিবেচনা করা হতো। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জনসভা বন্ধ হয় রাস্তার মাঝখানে স্থায়ী বিভাজক তৈরির পর। সেটাও হয়েছে প্রধানত ন্যাম ভবনগুলোতে এমপিদের আবাসনের ব্যবস্থা হওয়ার পর নিরাপত্তার কারণে। সংসদ ভবনের মাঠের কিছুটা যোগ হলে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউই হচ্ছে ঢাকার বৃহত্তম জমায়েতের জায়গা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জনপ্রতিনিধিদের সংসদকে জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার ব্যবস্থা যেভাবে পাকাপোক্ত হয়েছে, তাতে ওই এলাকায় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ আর কেউ কখনো পাবে কিনা সন্দেহ।

বিএনপির এবারের বিভাগীয় গণসমাবেশের জায়গার বিরোধ সমাধান হোক আর না-ই হোক, ঢাকায় রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক সমাবেশের স্থানসংকট অস্বীকার করার নয় এবং তার একটা সমাধান প্রয়োজন। মূলত যানজটের তীব্রতা বাড়া ও জনদুর্ভোগ এড়াতে অতীতের এসব জায়গায় এখন আর কোনো জনসভা বাস্তবসম্মত নয়। তবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয় আর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তা দুটি বছরের পর বছর সভা-সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তাতে যানজট যতই বাড়ুক, কিংবা মানুষ দুর্ভোগে পড়ুক। এসব সমাবেশের কিছু হয় অনুমতি নিয়ে, আর অনেকগুলোই হয় কোনো অনুমতি ছাড়া আকস্মিকভাবে, যাকে দলীয় নেতারা স্বতঃস্ফূর্ত বলে ব্যাখ্যা করে থাকেন। নগরবাসীও এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন এবং বাধ্য না হলে ওই দুটো এলাকা এড়িয়ে চলেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আগে যখন রেসকোর্স ছিল, তখন সেখানে নিয়মিত রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ হলেও সেটিকে পার্ক হিসেবে রূপান্তরের পর দীর্ঘদিন সেখানে এগুলো বন্ধ ছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে এখন রাজনৈতিক সমাবেশ নিয়মিতই হয়, তবে প্রধানত ক্ষমতাসীন দল ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোই সুবিধাটা বেশি পায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি চেয়েও পায়নি এবং সেবার তারা ঢাকায় কোনো বড় সমাবেশ করতে পারেনি। কোন জায়গার ধারণক্ষমতা কত, তা নিয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক হিসাব আজ পর্যন্ত শুনিনি বলে সে বিতর্ক একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। সমাবেশস্থলের আয়তন কত বর্গফুট, তার হিসাব ধরে হাজিরার পরিমাণ নির্ধারণ সম্ভব হলেও কেউ সেটা কখনো করেনি, অনুমান বা রাজনীতিকদের দাবিটাই গ্রহণ করে নিয়েছে।
আরও পড়ুন
নয়াপল্টনেই আটকে যাবে গণতন্ত্র!
যে কোনো ইস্যুতে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করে থাকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন। গত ১৮ সেপ্টেম্বরে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ।

ঢাকার অত্যধিক জনঘনত্ব এবং স্থানসংকটের কারণে কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষপাতি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তা যদি মতপ্রকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করে, সেটা হবে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কেননা, সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে সভা-সমাবেশের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। আইনের শাসন থাকলে তাতে যৌক্তিক বিধিনিষেধ থাকতেই পারে। তবে তা কখনো ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগীদের নির্ধারিত স্থানের বাইরে মাইলের পর মাইলজুড়ে মাইক লাগানো, ফেস্টুনে গাড়িচালকদের দৃষ্টিপথে বাধা তৈরি এবং মাইলের পর মাইল রাস্তার দুই ধারে যেনতেনভাবে বাস-ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখার সুযোগ দেয় না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রতি হওয়া প্রতিটি সভার ক্ষেত্রেই এ দৃশ্যগুলো দেখা গেছে। যৌক্তিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপির জন্য বেঁধে দেওয়া ২৬ দফা শর্ত কি আইনের শাসনের প্রতিফলন, না ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ?

কেউ কেউ মতপ্রকাশের জন্য গণমাধ্যমকে বিকল্প হিসেবে গণ্য করার কথা বলেন। উন্নত গণতন্ত্রে সেটা নিশ্চিতভাবে সত্য এবং সেটাই সাধারণ চর্চা। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল যেসব নীতি ও কর্মসূচি প্রকাশ করে, কিংবা প্রতিপক্ষের বক্তব্যর জবাব দেয়, তা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো পুরোটাই নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচার করে। বাংলাদেশে সরকারি বিটিভি এবং বিটিভির বেসরকারি ক্লোন চ্যানেলগুলোর কেউই বিরোধী দলগুলোর সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন, সেমিনার সরাসরি বা ধারণকৃত অবস্থায় সম্প্রচার করে না বা করতে পারে না। বড়জোর ৩০ সেকেন্ডের মতো বক্তব্য দেখানো হয় এবং সাংবাদিকদের বিশ্লেষণ প্রচার করা হয়। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যেভাবে গায়েবি সিদ্ধান্তে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে, হোটেলগুলো অতিথিদের জন্য দরজা বন্ধ রেখেছে, ঠিক সেরকম অশরীরী সিদ্ধান্তে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া বা সংযোগও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও যাতে ফেসবুক বা অন্য কোনো মাধ্যমে সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার করতে না পারে। ঢাকার সমাবেশের আগে দেশব্যাপী ধরপাকড়ের অভিযানকেও রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে কেউ দেখছে না।

সরকারের পক্ষ থেকে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠ কিংবা পূর্বাচলের কথা বলা হয়েছে। বোঝাই যায়, ভারতের কৃষকদের ১৬ মাসের অবস্থান ধর্মঘট থেকে কিছুটা শিক্ষা মিলেছে। সরকারবিরোধীদের রাজধানীর বাইরে রাখতে পারলে সরকার ও প্রশাসন অনেকটা ভারমুক্ত থাকতে পারে। সমস্যা হলো, শহরের মধ্যে হঠাৎ অবস্থান নেওয়ার মতো কর্মসূচির নজির কিন্তু আওয়ামী লীগেরই সৃষ্টি। বিরোধীরাও যে শিক্ষা নেয়নি, সেটা মনে করার কি কোনো কারণ আছে? বিরোধী দলের ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি বন্ধে ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে ফেলা, বিএনপি নেত্রীর বাড়ির সামনে বালুর ট্রাক ফেলে রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরির নজিরগুলো থেকে বিরোধী দলও বাধা এড়ানোর নানা কৌশল বের করেছে, যেগুলো বিভাগীয় সমাবেশের বেলায় দেখা গেছে। জনসভার জায়গা নিয়ে বিরোধের অবসান হবে বলে ওবায়দুল কাদের আশ্বস্ত করলেও তা কেন হলো না, সে প্রশ্নের জবাব প্রয়োজন। একই সঙ্গে ঢাকায় জনসভার জন্য উপযুক্ত একাধিক জায়গার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা দরকার।

*****কামাল আহমেদ সাংবাদিক।

সূত্র:প্রথম আলো
তারিখ:ডিসেম্বর ০৮, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ