Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

অর্থনীতির গেম চেঞ্জার–৩৪ অন্য রকম ডট কম-বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা এক তরুণের গল্প (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:মুনির হাসান।

২০০৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কয়েক তরুণ শিক্ষার্থী বুয়েটের অধ্যাপক ও আইআইসিটির পরিচালক লুৎফুল কবীরের সঙ্গে দেখা করে ‘কোনো একটি জাতীয় সমস্যা সমাধানে যুক্ত হওয়ার’ আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। তারপরই শুরু হয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বানানোর কাজ, যা তাঁরা সফলভাবে বানাতে সক্ষম হন। সে সময় অনেক নির্বাচনে তাঁদের তৈরি এই ভোটিং মেশিন ব্যবহৃত হয়েছে। আর এ সাফল্যের জন্য লুৎফুল কবীর ও তাঁর গবেষণা সহযোগীদের ছবি স্থান করে নিয়েছে সপ্তম শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির পাঠ্যবইয়ে। তাঁদেরই একজন মাহমুদুল হাসান। দেশের তরুণদের কাছে যিনি সোহাগ নামেই পরিচিত। পাস করার পর বুয়েটের আইআইসিটিতে প্রি-পেইড এনার্জি মিটার আর স্মার্টকার্ড নিয়ে গবেষণার কাজে যুক্ত থাকলেও অচিরেই চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর আর চাকরি করেননি তিনি।
ফিরে গেলেন ছাত্রাবস্থায় শুরু করা নিজেদের প্রতিষ্ঠান পাইল্যাবস বাংলাদেশে।

সহযোগী তিন সতীর্থ—মাসুম, মিকাইল ও আবুল হাসান। প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য শুরুতে শুধু সফটওয়্যারের কাজ করত। কিন্তু ইভিএম ও অন্যান্য কাজের অভিজ্ঞতায় ইলেকট্রনিকসে তারা ঝুঁকে পড়ে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে একদিন পাইল্যাবসের সদস্যরা হাজির হন এক ভদ্রলোকের কাছে। বিজ্ঞাপনদাতা রি-রোলিং মেশিনের জন্য সেন্সর ব্যবহার করে একটি স্বয়ংক্রিয়করণের কাজ করার লোক খুঁজছিলেন। তাঁর মেশিনটির অনেকখানি ম্যানুয়েল। হাতে লিভার টানাটানি করতে করতে সময়মতো সবকিছু করা হয় না। মাহমুদুল হাসানদের কাছে তাঁর সমস্যা ও সেন্সরটি দিয়ে বললেন, কাজটা পারবেন কি না, কয়েক দিন পরে এসে জানাতে পারেন। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন তাঁরা পারবেন না। কারণ, এর আগে বেশ কয়েকটি দল তাঁর সঙ্গে দেখা করে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু কয়েক দিন পর যখন সোহাগরা ফিরে আসেন, তখন তিনি যুগপৎ অবাক ও বিস্মিত হলেন। কারণ, তাঁরা কোনো কাগজপত্র নিয়ে আসেননি, যন্ত্রটি বানিয়ে তবেই এসেছেন। বিলের দাবি ছিল ২৫ হাজার টাকা। ভদ্রলোক দিয়েছিলেন এক লাখ টাকা।

ইলেকট্রনিকস নিয়ে কাজ করার প্রতিষ্ঠান পাইল্যাবসে মাহমুদুল হাসান ও তাঁর সঙ্গীদের ধারণা, মুনাফার সর্বোচ্চায়ন নয়, সমাজের উন্নতি হওয়া উচিত ব্যবসার লক্ষ্য। মাহমুদুল হাসান বললেন, ‘সমাজ ভালো থাকলেই না আমরা ভালো থাকব।’ এ কারণে পাইল্যাবসের লভ্যাংশ ব্যয় হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায়।

তবে মাহমুদুল হাসানের উদ্যোক্তা–জীবনের শুরু আরও আগে, ১৯ বছর বয়সে। ২০০০ সালে বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পরপরই সেশনজটের কারণে অখণ্ড অবকাশের সুযোগ পাওয়া যায়। ক্লাস ও প্রাইভেট পড়ার সময় তিনি খেয়াল করেন যে শিক্ষকদের পড়ানোর পর প্রশ্ন করার তেমন একটা সুযোগ থাকে না। শিক্ষকেরাও প্রশ্ন করাকে তেমন একটা পছন্দ তো করেনই না, বরং অনেকে প্রশ্ন করার ব্যাপারটিকে নিরুৎসাহিত করেন। সে সময় তাঁর মনে হলো, যদি সুযোগ পান, এমন একটি পড়ানোর মতো উদ্যোগ নেবেন, যেখানে প্রশ্ন করায় কোনো বাধা থাকবে না। সেই ভাবনা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে একটা একাডেমিক কেয়ার চালু করেন, নাম দেন ‘উদ্ভাস’। সেই উদ্ভাস এখন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি সহযোগী শিক্ষা সংস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রথম সাত বছর বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। টিউশনির টাকা জমিয়ে মাত্র ৬ হাজার টাকা হাতে নিয়ে মাসিক ৮০০ টাকা ভাড়ায় একটি ছোট কক্ষ ভাড়া নিয়ে উদ্ভাসের যাত্রা শুরু। যত সময় গিয়েছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। একসময় আট মাসের ভাড়াও জমে গেছে। অংশীদারত্বে থাকা একাধিক মানুষ ছেড়ে যান। কিন্তু উদ্ভাসের যাত্রার শেষ দেখার জন্য মাহমুদুল হাসান ও আবুল হাসান থেকে যান। এখন সারা দেশে সেই উদ্ভাসের শাখাই আছে প্রায় ৬০টি!

১৯৮১ সালের ৭ জুন জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীতে শিক্ষক বাবা আবুল হোসেন ও ডাক বিভাগের কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমের তৃতীয় সন্তান হিসেবে জন্ম মাহমুদুল হাসানের। বড় দুই বোন আশরাফুন নাহার ও জেসমিন নাহার গৃহবধূ। কী পড়ালেখায়, কী গান-বাজনায়, কী বিজ্ঞান প্রকল্প বানানো—সবটাতেই মাহমুদুল হাসান অগ্রগণ্য। ১৯৯৮ সালে সরিষাবাড়ী থেকে ঢাকা বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় পঞ্চম হওয়া, জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ে চলে আসা, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্কুলের নেতৃত্ব দেওয়া—সবই তাঁর কিছু প্রকাশমাত্র। ২০০০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসিতে চতুর্থ হয়ে বুয়েটের তড়িৎকৌশলে পড়তে আসা। এর পরের গল্পটা আমরা এখন জানি। এরই মধ্যে উদ্ভাস, পাইল্যাবস হয়ে জন্ম হয়েছে অন্য রকম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা ‘অন্যরকম গ্রুপ’-এর। মাহমুদুল হাসান এ গ্রুপের চেয়ারম্যান।

উদ্ভাসের পাশাপাশি স্বপ্নধারা পাঠশালা নামের আরও একটি শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছে অন্যরকম পরিবার। সাইফুজ্জামান সোহাগ নামের এক যুবকের শুরু করা বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ানোর স্কুলটি প্রতিষ্ঠাতার আকস্মিক মৃত্যুতে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে অন্যরকম গ্রুপ সেটির দায়িত্ব নেয়। এখন সোহাগ স্বপ্নধারা পাঠশালার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্ভাবন ও উদ্যোগের ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহী করা হয়। পাঠশালায় একটি কম্পিউটার ল্যাবও আছে।

মাহমুদুল হাসানদের রয়েছে সফটওয়্যার তৈরির প্রতিষ্ঠান অন্যরকম সফটওয়্যার। সফটওয়্যার ও ইলেকট্রনিকস জিনিসপত্র তৈরির কাজ চলতে থাকে সমানতালে। পাইল্যাবস মূলত ইলেকট্রনিক বিভিন্ন পণ্য নিয়ে গবেষণা করে। পাইল্যাবসের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম (ভিটিএস), গার্মেন্টসে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা, ডিজিটাল স্পিড মিটার, নিটিং রোলারের ডিজিটাল কাউন্টার, সোলার ইনভার্টার ইত্যাদি। তবে ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিকস ছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যান্য শাখায়ও গবেষণা চালু করার প্রত্যয় নিয়ে পথ চলছে প্রতিষ্ঠানটি।

অন্যরকম সফটওয়্যারের সেবার মধ্যে রয়েছে নির্ভুলভাবে ব্যালট পেপার গণনা করার সিস্টেম, পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস রোধে নৈর্ব্যক্তিক ও বহুনির্বাচনী প্রশ্নগুলোকে একদমই নতুন করে সাজানোর উপায়। তাদের শিক্ষাবিষয়ক সফটওয়্যারের সেবা নিয়েছে সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

মাহমুদুল হাসান একে একে প্রতিষ্ঠা করেছেন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগই সফলতার মুখ দেখেছে। সেগুলোর মধ্যে দুটি উদ্যোগ খুবই চমকপ্রদ। একটি হলো অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স—বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স কিট। এখানে একাডেমিক বিজ্ঞান বইয়ের সঙ্গে মিল রেখে এমনভাবে বিজ্ঞান বাক্সগুলো তৈরি করা হয়, ক্লাসে যে বিষয়টি শিক্ষার্থীরা পড়ছে, সেগুলোই হাতে–কলমে পরীক্ষা করতে পারে বিজ্ঞানবাক্সের সাহায্যে। মাহমুদুল হাসান মনে করেন, বিজ্ঞানবাক্স হলো শিশুদের চিন্তা উদ্রেক করার একটি প্রচেষ্টামাত্র, যেন বিজ্ঞানকে কখনোই জটিল ও দুর্বোধ্য মনে না হয়।

আর দ্বিতীয়টি হলো ‘অন্যরকম পাঠশালা’। ২০০৩ সাল থেকে বিভিন্ন পাঠ্যবিষয়ের ওপর পূর্ণাঙ্গ ভিডিও ক্লাস সিডিতে ধারণ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করা হতো। শর্ত থাকত, নিজে উপকৃত হওয়ার পর অন্তত আরও দুজনকে সিডিটি দিতে হবে। মনে রাখা দরকার, খান একাডেমি ও ইউটিউবের যাত্রা কিন্তু এর পরই শুরু হয়েছে।

২০১১ সালে বুয়েটের তিন প্রকৌশলী এসে যুক্ত হন মাহমুদুল হাসান ও আবুল হাসানের সঙ্গে। তৈরি হয় অন্যরকম ওয়েব সার্ভিসেস। ২০১২ সালে সেখান থেকেই প্রতিষ্ঠা পায় অনলাইনে বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘রকমারি’। রকমারির আবির্ভাবের অল্প দিনের মধ্যেই দেশের বাণিজ্যিক বই বিপণনের ধারণাই পাল্টে যায়। বিভাগীয় ও কতিপয় জেলা শহরের বাইরের পাঠকদের হাতে তাঁদের পছন্দ বই তুলে দেওয়ার এ উদ্যোগ গত প্রায় এক দশকে দেশের প্রকাশনাশিল্পে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ছাপিয়ে সারা দেশে সারা বছর বই বিপণনে দেশের বৃহত্তম প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, রকমারি ও অন্যান্য ই-কমার্সের হাত ধরে দেশের ই-কমার্সেরও একটি জোয়ার তৈরি হয়েছে এই এক দশকে। এখনো একবারে মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে যেকোনোসংখ্যক বই পৌঁছে দেয় রকমারি। রয়েছে দুই লাখের বেশি বইয়ের তালিকা, সম্ভবত দুই বাংলার সবচেয়ে বড় বইয়ের অনলাইন তালিকা।

এ ছাড়া অন্যরকম পরিবারের আছে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ও গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের অনলাইন প্রতিষ্ঠান টেকশপ। এ প্রতিষ্ঠানও ইতিমধ্যে শৌখিন ইলেকট্রনিকস ছাড়িয়ে পেশাদারদেরও হাতের লাঠি হয়ে উঠেছে।

অন্যরকম বাংলাদেশের মূল তিনটি বিষয় হলো শিক্ষা, উদ্যোগ ও উদ্ভাবন। অন্যরকম বাংলাদেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে কাজ করেন দেড় হাজারের বেশি কর্মী। আর খণ্ডকালীন, ইন্টার্নশিপসহ আরও অন্যান্যভাবে যুক্ত আছেন দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।
মাহমুদুল হাসান স্বপ্ন দেখেন, একদিন দেশের সব মানুষ অন্যরকম বাংলাদেশের কোনো না কোনো উদ্যোগের সেবা গ্রহণ করবেন। শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন—এই মূলমন্ত্রের মধ্যে ভবিষ্যতে শিক্ষাতেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে চান মাহমুদুল হাসান। তাঁর মতে, একটি শিক্ষিত জাতিই আসলে একটি সুন্দর ও সুখী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারে। আর তাহলেই অন্যরকম পরিবার একদিন বাংলাদেশের সবচেয়ে সুখী প্রতিষ্ঠান হতে পারবে।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ জানুয়ারী ১৫, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ