Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

অর্থনীতির গেম চেঞ্জার–২৫ সহজ আর্থিক লেনদেন যার (কামাল কাদীর) হাত ধরে

Share on Facebook

লেখক: শওকত হোসেন।

কামাল কাদীর বাংলাদেশের সমান বয়সী। জন্ম একাত্তর সালের ৪ মার্চ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক ২২ দিন আগে। জন্মই সংঘাতময় একটি পরিবেশের মধ্যে। এরপরে স্বাধীন বাংলাদেশ আর কামাল কাদীরের বেড়ে ওঠাও একসঙ্গে। কারও পথই অবশ্য মসৃণ ছিল না। এরপরে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ, কামাল কাদীরের বিকাশও হয়েছে এ সময়ে।
মোবাইল আর্থিক সেবার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এই বিকাশ। সারা দেশে ছড়িয়ে আছে বিকাশ। বিকাশের উত্থান বিস্ময়কর। আর এই উত্থানের গল্পটাও চমকপ্রদ। সেই গল্পই একদিন শোনালেন কামাল কাদীর।

দশ ভাইবোনের একজন, কামাল কাদীর সবার ছোট। বাবা যশোরের আইনজীবী ছিলেন, ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী। ১৯৭১ সালে মার্চে যুদ্ধ শুরু হলে সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি নড়াইলে চলে যান। দেশ স্বাধীন হলে আবার যশোরে ফিরে এলেও বাড়ি লুটপাট হওয়ায় নতুন করে জীবন শুরু করতে হয়েছিল। তবে পুরো পরিবারে এর চেয়ে বড় ধাক্কা আসে ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে। বাবা দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর মা দশ ভাইবোনকে মানুষ করেছেন।

মাধ্যমিক পাস করার পরে কামাল কাদীর বৃত্তি নিয়ে পড়তে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। পড়তেন অর্থনীতিতে, পড়েছেন চিত্রকলাও। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘খালি চিত্রকলা পড়ব শুনলে অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে যান। তাই অর্থনীতি পড়া।’

পাস করার পরে দেশে ফিরেছিলেন ১৯৯৭ সালে, ছবির প্রদর্শনী করতে। তখনই পরিচয় হয় অক্সিডেন্টাল অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানির বাংলাদেশের প্রধান নাইজেল হপকিনসনের সঙ্গে। দেশের মধ্যেই গবেষণার প্রস্তাব দিলেন তিনি। গ্যাসের চাহিদা কেমন, তা বের করার গবেষণায় সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাঁর ভাষায়, এটা ছিল পুরো বাংলাদেশকে জানার ও বোঝার জন্য বিশাল এক সুযোগ।

টানা তিন বছর এ কাজ করলেন। এরই মধ্যে আমেরিকায় শুরু হয়েছে ডটকমের পালা। বড় ভাইকে নিয়ে একটা অ্যানিমেশন স্টুডিও খুলে বসলেন। এরপর নিজের মাথা দেখিয়ে আবারও হাসতে হাসতে বললেন, ‘সেই স্টুডিও চালাতে গিয়ে আমার চুল সব হারালাম। দিনরাত পরিশ্রম করেও স্টুডিওটিকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করতে পারলাম না। তবে শিখেছি অনেক কিছু। আসলে একেকটি ব্যর্থতা থেকেও অনেক কিছু শেখার থাকে।’

ভাবলাম, এমন কিছু করতে হবে, যেখানে গরিব মানুষটির অর্থের নিরাপত্তা আছে, কিন্তু খরচ কমবে অনেক। আবার একটা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাও থাকবে। কামাল কাদীর আবার পড়তে চলে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে। মাস্টার্স শেষ করে চাকরি শুরু করলেও মন বসল না। দেশে ফিরে এলেন ২০০৫ সালের ১৪ আগস্ট। বেশ তৃপ্তি নিয়েই বললেন, ‘দেশে ফিরে সেই যে টানা কাজ করছি, এখন পর্যন্ত করেই যাচ্ছি।’ আর সেই কাজের ফল হচ্ছে মোবাইল আর্থিক সেবার সবচেয়ে বড় কোম্পানি ‘বিকাশ’-এর বিকাশ। মাঝে অবশ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অনলাইনভিত্তিক কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান সেলবাজার। ২০০৮ সাল থেকে নতুন উদ্যোগের পেছনে লেগে পড়লেন। ‘দেখলাম, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কেনাবেচা হলেও লেনদেন হচ্ছে নগদ টাকায়। আবার ব্যাংকে লেনদেনের খরচও অনেক। ব্যাংকের নিজস্ব অনেক ব্যয় থাকে, বেতন দিতে হয়, অফিস লাগে, আছে আরও নানাবিধ খরচ। একজন গরিব মানুষের গড় লেনদেন হয়তো হাজার-বারো শ টাকা। কিন্তু এই টাকা পাঠানোর যে খরচ, তা ব্যাংকের পোষাচ্ছে না। ভাবলাম, এমন কিছু করতে হবে, যেখানে গরিব মানুষটির অর্থের নিরাপত্তা আছে, কিন্তু খরচ কমবে অনেক। আবার একটা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাও থাকবে। এই ধারণা নিয়ে দেখা করলাম ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে। ব্র্যাককে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চিন্তা করতে বললাম।’

আফ্রিকায় তখন মোবাইল আর্থিক সেবা চালু হয়ে গেছে। কামাল কাদীর সেখানে গিয়ে হাতেকলমে কাজ দেখলেন। বসে থাকতেন বিভিন্ন দোকানের পাশে। দেখতেন কীভাবে কাজটি হচ্ছে, নিয়মকানুন কী, গ্রাহকেরা কী বলেন ইত্যাদি।

২০০৯ সাল। ক্ষমতায় আসা নতুন সরকার তখন প্রযুক্তিনির্ভর অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের দিকে নজর দিচ্ছে। এ সময় বশেষ আগ্রহ দেখালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান। সব দিক থেকেই কাজ এগোল। বড় ভাই ও আরও দুজনকে নিয়ে কামাল কাদীর ‘মানি ও মোশন এলএলসি’ নামে একটি কোম্পানি করেছিলেন। যুক্ত হলো ব্র্যাক ব্যাংক। নীতিমালায় ছিল, একটা ব্যাংকের ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকতে হবে, যাতে সমস্যা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিকাশের শুরু ২০১১ সালের ২১ জুলাই।

বিকাশ নামটার পেছনের গল্পটাও বললেন কামাল কাদীর। আল্লাহ মালিক কাজমী তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক। তিনি বললেন, ক্যাশ ও টাকা—শব্দ দুটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব পরিভাষা। সুতরাং এ দুই শব্দ নাম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কামাল কাদীর বললেন, ‘আমরা এটা মেনে নিয়ে এমন একটা শব্দ খুঁজছিলাম, যা ক্যাশের কাছাকাছি, আবার মানুষ সহজে বুঝতে পারে। তখন বিকাশ নামটা এল। একটা ইতিবাচক শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বিকশিত হওয়া।’

নিজেদের মূলধনের বাইরে অনুদান পান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে। পরে তারাই অংশীদার হয়ে যায়। বিনিয়োগ করে বিশ্বব্যাংকের সংস্থা আইএফসি। এর দীর্ঘ সাত বছর পরে ২০১৮ সালে একজন কৌশলগত অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয় চীনের আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল।
বিকাশের বিস্তার এখন দেশব্যাপী। পরিবার থেকে দূরে থাকা অনেক গরিব মানুষের কাছে বিকাশ যেন তাদের জীবনেরই অংশ। আর এটাই কামাল কাদীরের সার্থকতা।

মূলত চিন্তার ফসল বিকাশ। আমাদের দেশে তো এই চিন্তা বা আইডিয়ারই বেশি অভাব। তবে তা মানলেন না কামাল কাদীর। বললেন, ‘আসলে আইডিয়া হচ্ছে একটি কাজের মাত্র ১ শতাংশ, আর বাস্তবায়ন হচ্ছে ৯৯ শতাংশ। আইডিয়ার শেষ নেই। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গেলে যেসব সমস্যা আসবে, সেগুলো কীভাবে সামলানো যাবে সেটাই আসল। এ ক্ষেত্রে লেগে থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য করতে হবে কঠোর পরিশ্রম। আর আমাদের দেশটি এখনো নতুন। সবার মধ্যে দেশ গড়ার একটা স্পৃহা আছে। এটিকে ব্যবহার করে অনেক কিছুই করা সম্ভব।’

বিকাশের বয়স মাত্র ১০ বছর। এই এক দশকেই সাধারণ মানুষের কাছে মোবাইলে আর্থিক সেবার সমার্থক শব্দতে পরিণত হয়েছে ‘বিকাশ’। লেনদেনের এখন সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল আর্থিক সেবা। আর দেশে এই সেবার পথদ্রষ্টা হচ্ছেন কামাল কাদীর।

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ