লেখক: প্রতীক বর্ধন।
অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলামের নাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার আগে ছয় দফা ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পরামর্শদাতা। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রথম জীবনে নুরুল ইসলাম পাকিস্তানের উন্নয়নে ইকোনোমেট্রিক মডেল প্রণয়নে কাজ করেছেন। তবে তাঁর মূল আগ্রহের জায়গা নীতি প্রণয়ন। তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদ থেকে তিনি ক্রমে গবেষণাধর্মী অর্থনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি পাকিস্তানের জন্য উন্নয়ন মডেল তৈরির চেষ্টা করেছেন। ১৯৫০-এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে শুধু তিনি গবেষণায় জড়িত ছিলেন। এরপর ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। সেই ব্যুরোর গবেষণা পরিচালক হিসেবে ৪০০ রুপি বেতনে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। তবে তাঁর মূল অবদান হলো, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অভিজ্ঞতাভিত্তিক গবেষণার সংস্কৃতি চালু করেন। এরপর তিনি সিলেবাস আধুনিকীকরণে কাজ করেন।
স্বাধীনতার পর পাকিস্তান দাবি করেছিল, অখণ্ড পাকিস্তান যে ‘কনসোর্টিয়াম অব ডোনার’ বা সাহায্যদাতাদের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছিল, বাংলাদেশকে তার দায় নিতে হবে, যার পরিমাণ ১২০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ করে। বলা হলো, বাংলাদেশ পাকিস্তানের উত্তরাধিকার রাষ্ট্র নয়। পাকিস্তানের সাহায্যদাতা কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ঋণ নিতে হবে না। এ নিয়ে দাতাদের বৈঠক হলো। পাকিস্তানের সাহায্যদাতাদের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের তাতে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হলো, এটা পাকিস্তান কনসোর্টিয়ামের বৈঠক নয়। সুতরাং বাংলাদেশে এতে সভাপতিত্ব করবে। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের পর নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। বঙ্গবন্ধুর সামনেও তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের উত্তরাধিকার রাষ্ট্র নয়, সুতরাং আমরা তার রাজনৈতিক বা আইনি দায় নেব না। শেষমেশ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল এই দাবি ৪০ কোটি ডলারে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়, যেসব প্রকল্প শুধু এ অঞ্চলে হয়েছিল, সেগুলোর দায় বাংলাদেশ নেয়। এ আলোচনায় নুরুল ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
নুরুল ইসলামের আরেকটি বড় অবদান হলো বাংলাদেশকে এলডিসিভুক্ত করা। ১৯৭৩ সাল থেকে এলডিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য দর–কষাকষি শুরু করে বাংলাদেশ। অধ্যাপক নুরুল ইসলামের একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ার কারণে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধাসহ নানা সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। বলা যায়, দেশের বর্তমান যে অগ্রগতি, তার মূল কারণ এই এলডিসিভুক্তি।
অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে নিয়ে প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’ প্রচ্ছদ কাহিনি করেছিল ২০১০ সালে। শিরোনাম ছিল ‘ড. নুরুল ইসলাম: একজন অর্থনীতিবিদের প্রতিকৃতি’। সেখান থেকে কিছু অংশ তুলে দেওয়া যেতে পারে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করেন নুরুল ইসলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের বক্তব্য, প্রথম বর্ষেই ভর্তি হতে হবে। তিনি বললেন, ‘আমি এক বছর কলকাতায় পড়ে এসেছি, তাহলে কেন প্রথম বর্ষে ভর্তি হব?’ শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের হস্তক্ষেপে তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে ভর্তি করা হয়। শর্তটি হলো, দ্বিতীয় বর্ষে ফল ভালো না করলে পিছিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পিছিয়ে পড়েননি তিনি। উল্টো দ্বিতীয় বর্ষ তো বটেই, চূড়ান্ত পরীক্ষায়ও তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন।
১৯২৯ সালে চট্টগ্রামের পটিয়ায় নুরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আবদুর রহমান ছিলেন স্কুলশিক্ষক, পরে সিলেট অঞ্চলের শিক্ষা কর্মকর্তা হয়েছিলেন। ১৯৪৫ সালে চট্টগ্রাম মুসলিম হাইস্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক (এসএসসি সমমানের) পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন। উচ্চমাধ্যমিকে অবিভক্ত বাংলায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে তিনি ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সি কলেজে ৩০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র তিনজন ছিল মুসলমান। প্রথম বর্ষ শেষ করতেই কলকাতায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। নুরুল ইসলাম ফিরে আসেন ঢাকায়।
ঢাকায় এসে ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে লাভ করেছিলেন কালী নারায়ণ বৃত্তি। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর নুরুল ইসলাম পাকিস্তান সরকারের বৃত্তি নিয়ে হার্ভার্ডে চলে গেলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। চার বছর পর ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে রিডার (সহযোগী অধ্যাপক) পদে যোগ দিলেন। তা নিয়েও বিরোধিতা দেখা দিল। ২৬ বছরের তরুণ কী করে রিডার হবেন? কেউ কেউ উপাচার্য জেনকিনের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনলেন। জবাবে উপাচার্য বললেন, ‘আমি তো নুরুল ইসলামকে চিনিই না, স্বজনপ্রীতি করব কীভাবে? পরীক্ষার ফল দেখেই আমি তাঁকে নিয়েছি।’
শিক্ষকতা পেশায় তিনি নিয়োজিত ছিলেন ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত। দীর্ঘ ১১ বছর কাটিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। শিক্ষকতা, পরিকল্পনা কমিশন গড়ে তোলা এবং দেশি-বিদেশি সংস্থায় গবেষণা—এই তিন পর্বে তাঁর কর্মজীবন বিভক্ত হলেও শিক্ষকতা পেশাটি তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। শিক্ষকতা পেশায় থাকা অবস্থায় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বিভিন্ন কমিশনের সঙ্গে যুক্ত হন। তখন দেশে বেশি অর্থনীতিবিদ ছিলেন না। তাঁকে মূল্য কমিশন, প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থ কমিশনের সদস্য করা হয়। কিন্তু এসব কমিশনে কাজ করে এই চৌকস অর্থনীতিবিদ বুঝতে পারলেন, পশ্চিম পাকিস্তানিরা সব ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানিদের ঠকাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।
১৯৫৬ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত অর্থনীতিবিদদের সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে যোগ দেন ড. এম এন হুদা, এ এফ এ হুসেইন, মাজহারুল হক, এম টি হক, এ সাদেক, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল্লাহ ফারুক ও নুরুল ইসলাম। ওই সম্মেলনে তাঁরা প্রথম দ্বৈত অর্থনীতির ধারণা উত্থাপন করেন। ষাটের দশকের শুরুতে সামরিক শাসক আইয়ুব খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপককে ডেকে পাঠান অর্থনৈতিক বিষয়ে তাঁদের মতামত জানার জন্য। এ দলেও ড. নুরুল ইসলাম ছিলেন, আরও ছিলেন এস এম হুদা, এ এফ এ হুসেইন ও আবদুল্লাহ ফারুক। তাঁদের বক্তব্য আইয়ুব খান ধৈর্যসহকারে শোনেন, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেননি।
১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস (পিআইডিই)। প্রথমে এর প্রধান ছিলেন একজন আমেরিকান। পরে সিদ্ধান্ত হয়, দেশীয় অর্থনীতিবিদকেই এ পদ দেওয়া হবে। ১৯৬৫ সালে বন্ধুদের পরামর্শে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম সেখানে যোগ দেন। এ প্রতিষ্ঠানে যেসব গবেষণা হয়েছে, তাতে পূর্ব-পশ্চিমের বৈষম্য আরও স্পষ্ট হয়। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে আইয়ুব খান বিদায় নেওয়ার পর তিনি ছয় দফা অর্থনৈতিক রূপরেখা প্রণয়নে সহায়তা করেন। মার্চ-এপ্রিলের দিকে তৎকালীন স্টেট ব্যাংকে চাকরিরত তাঁদের বন্ধু রশিদ এসে জানালেন, বঙ্গবন্ধু দেখা করতে বলেছেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর দেখা হতো বিভিন্ন স্থানে। কখনো ঢাকার বাইরেও তাঁরা বৈঠক করেছেন।
বঙ্গবন্ধু তাঁকে বললেন, ‘ছয় দফা বাস্তবায়ন করতে হলে এর অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা কীভাবে সাজানো যায়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করুন।’ এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন আরও কয়েকজন অর্থনীতিবিদ। তাঁরা কাজ করলেন। নির্বাচনের আগেই তাঁরা খসড়া সংবিধান তৈরি করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকেও সেই রূপরেখা পেশ করা হয়। প্রথম থেকেই নুরুল ইসলামের ধারণা ছিল, আলোচনা সফল হবে না। কেননা, পাকিস্তানিরা এটা মেনে নেবে না। আক্ষরিক অর্থে ছয় দফা বাস্তবায়ন হলে দেশ এক থাকে না। কিন্তু তারা এভাবে গণহত্যা চালাবে, সেটি ভাবেননি তিনি।
এপ্রিলের শুরুতে তিনি আগরতলা হয়ে দিল্লিতে যান। সেখানে গিয়ে শুনতে পান, তাজউদ্দীন আহমদ কলকাতায়। প্রধানমন্ত্রীর সচিব পি এন ধরের সহায়তায় নুরুল ইসলাম আমেরিকায় চলে যান। ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তিনি। নিক্সন প্রশাসন প্রচণ্ডভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করলেও শিক্ষাবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন তাঁরা পান। স্বাধীনতার পরপরই তিনি দেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরে চট্টগ্রামে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করে ঢাকায় এসেই শুনতে পেলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। তখন তিনি ভাবলেন, ‘দেখা করে যাই।’ তাঁর সঙ্গে দেখা হতেই তিনি তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘লন্ডনেই আপনার খোঁজ করেছি। আপনাকে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্ব নিতে হবে। কীভাবে করবেন, কাদের নিয়ে করবেন, তার একটি রূপরেখা দিন।’
বঙ্গবন্ধুর কথায় নুরুল ইসলাম কাজে লেগে পড়লেন। কমিশনের সদস্য হিসেবে যাঁদের নাম তিনি দিলেন, বঙ্গবন্ধু তা মেনে নিলেন। একটি নতুন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ খুবই কঠিন কাজ হলেও সানন্দে তাঁরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। তাঁরা প্রথমে দুই বছরের জন্য একটি পুনর্বাসন কর্মসূচি নিলেন (১৯৭২-১৯৭৩)। এরপর পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করলেন (১৯৭৩-১৯৭৮)। এসব কাজে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু অনেক সরকারি কর্মকর্তাই নতুন ধারণা ও প্রতিষ্ঠানকে সহজে গ্রহণ করতে পারলেন না। পরিকল্পনা কমিশনকে সমান্তরাল ক্ষমতাকেন্দ্র ভাবতে শুরু করলেন। সরকারের সমর্থক ও বিরোধী উভয় শ্রেণির পত্রিকায় তাঁদের বিরুদ্ধে লেখালেখি হতে থাকে। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারলেন, জাতীয় নীতি গ্রহণে তাঁদের গুরুত্ব থাকছে না। তখন সিদ্ধান্ত নিলেন, পরিকল্পনা কমিশন ত্যাগ করবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে সে কথা সরাসরি বললেন না। বললেন, কিছুদিনের জন্য ছুটি চাই। তিনি প্রথমে রাজি হলেন না, পরে তাঁর পীড়াপীড়িতে রাজি হলেন। বললেন, ‘এক বছর পর আপনাকে ফিরে আসতে হবে।’ সেটি ১৯৭৫ সালের মার্চ-এপ্রিলের ঘটনা। কিন্তু আর ফেরা হলো না। ১৫ আগস্ট বিপথগামী সেনাসদস্যদের হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত হন।
নুরুল ইসলামের গবেষণার ক্ষেত্র বিশাল। ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়ন, খাদ্যনিরাপত্তা ও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট নীতিমালা নিয়ে তাঁর অসংখ্য নিবন্ধ ছাপা হয়েছে বিদেশি পত্রিকায়। বর্তমানে তিনি বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। কিন্তু বিদেশে বসবাস করলেও তিনি দেশকে কখনোই ভোলেননি। আর তাই সুযোগ পেলেই তিনি ছুটে আসেন দেশে। এ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সব সময় পরামর্শ দেন তিনি।
‘অ্যান অডিসি জার্নি অব মাই লাইফ’ নামে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের একটি আত্মজীবনী প্রকাশ করেছে প্রথমা। ২০১৮ সালে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দেশের আরেক কৃতী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছিলেন, ‘নুরুল ইসলাম একজন পরিপূর্ণ অর্থনীতিবিদ। আমি মনে করি, বাংলাদেশের অমর্ত্য সেন (ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ) হতে না পারার কোনো কারণ তাঁর ছিল না। তবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখবেন, নাকি পেশাদার অর্থনীতিবিদ হবেন—এ বিষয়ের দ্বন্দ্ব তিনি সারা জীবনে কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এ দ্বন্দ্বের কারণে একজন বিশ্বমানের বাঙালি অর্থনীতিবিদ পাওয়া থেকে বিশ্ব বঞ্চিত হয়েছে বলে আমি মনে করি।’ রেহমান সোবহানের মতে, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর বিশ্লেষণী ক্ষমতা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের চেয়ে বেশি। আর্থসামাজিক বিষয়ে তাঁর বিশ্লেষণ অসাধারণ। জীবনের একটি বড় সময় বাংলাদেশের বাইরে কাটানোর পরও তিনি দেশের জন্য গভীরভাবে ভাবেন, চিন্তা করেন। কিন্তু ওয়াশিংটনে বসে তিনি যা ভাবেন, ঢাকায় বসে ভাবতে পারলে তা আরও বেশি ফলপ্রসূ হতে পারত। সবকিছুর পর এ বয়সেও বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁর চিন্তা অব্যাহত আছে।
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, ‘৩০ বছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাস করেন। ওখানে বসে প্রতিনিয়ত দেশের খোঁজ রাখেন। তাহলে কেন দেশে আসছেন না, এমন প্রশ্ন আমি তাঁকে করেছিলাম। উত্তরে তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকেরা যখন চাইবেন, তখনই উপদেশ দেবেন। নিজ উদ্যোগে দিতে যাবেন না। গত ৩০ বছরে কেউ ওনার কাছে উপদেশ চাননি। যখন যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তাঁদের নীতিনির্ধারকদের একজনের সঙ্গেও তিনি সরাসরি আলোচনায় বসার সুযোগ পাননি। একবার তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ২-৩ পৃষ্ঠার একটি লিখিত পরামর্শ দিয়েছেন। পরে তিনি জেনেছেন, সেটা কেউ পড়েও দেখেননি।’
অধ্যাপক নুরুর ইসলাম দেশে থাকেন না ঠিকই। কিন্তু স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে তাঁর গবেষণা ও স্বাধীন দেশের পুনর্গঠনে তাঁর অবদানের কারণে দেশের অর্থনীতির পথরচয়িতার একজন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ডিসেম্বর ০১, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,