৯ই নভেম্বর ২০১৯ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা ফৈজাবাদে বহু বিতর্কিত বাবরি মসজিদ ও অযোধ্যায় বিতর্কিত জায়গায় নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে অযোধ্যায় রাম মন্দির হবে আর মসজিদ হবে অন্যত্র। ভারতের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ভারতের বহুল আলোচিত এই মামলার রায় পড়া শুরু করেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে গড়া পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। এ রায় ঘোষণাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। গতকাল থেকে শুরু হয়ে আগামীকাল ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত শহরটিতে নিরাপত্তার কারণে সান্ধ্য আইন বলবদ আছে। বাবরি মসজিদ তৈরী থেকে আজ পর্যন্ত নানা বিতর্কের মধ্যে আজকের রায় ঘোষনা আর একটি পদক্ষেপ, পরবর্তি পদক্ষেপ কি তা নির্ধারণ করবে পরবর্তি প্রজন্ম।
ভারতের বহু বিতর্কিত বাবরি মসজিদ ধারণা করা হয় ১৫২৮ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি বাবরি মসজিদ তৈরি করেন।
১৯৪৯ সালে বিতর্কিত ধাঁচার বাবরি মসজিদের মূল গম্বুজের মধ্যে নিয়ে আসা হল রাম লালার মূর্তি, এর পর থেকে শুরু হয় ধর্শ রাজনীতি ও বিদ্বেষ।
১৯৯০, সালের ২৫ ডিসেম্বর বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি গুজরাটের সোমনাথ থেকে রথযাত্রা শুরু করেন আর নানান উত্তেজনার মধ্যে অবশেষে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর করসেবকরা বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়।
কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের বিশ্বাস, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় ভগবান রামচন্দ্র জন্মেছিলেন। তাঁর জন্মস্থান বলে চিহ্নিত জায়গায় ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট বাবরের আমলে একটি মসজিদ তৈরি হয়। নাম দেওয়া হয় বাবরি মসজিদ। মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি নিয়ে সেই থেকে হিন্দু-মুসলিম যে বিরোধ চলছিল, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর তা অন্যদিকে বাঁক নেয়। ওই দিন কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেন। এ নিয়ে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত দুই হাজার লোক নিহত হয়। সেই থেকে বাবরি মসজিদের ২ দশমিক ৭৭ একর জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই জমি বিবদমান তিন পক্ষ রাম লালা, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ও নির্মোহী আখড়ার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করার নির্দেশ দেন। তবে সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ হয় সুপ্রিম কোর্টে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, মসজিদটি ফাঁকা জায়গায় নির্মাণ হয়নি। এর নিচে অন্য কাঠামো ছিল। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার খননের ফলে যেসব জিনিস পাওয়া গেছে, এতে বোঝা গেছে সেগুলো ইসলামি নয়। অযোধ্যায় বিকল্প স্থানে মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। মন্দিরের জন্য সরকারকে ট্রাস্ট গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে এ ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। বিরোধপূর্ণ জমি চলে যাবে ট্রাস্টের কাছে।
রায়ে বলা হয়, বাবরি মসজিদ ভাঙার মধ্য দিয়ে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।
ভারতের অযোধ্যার আলোচিত বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি মামলার রায়ে মসজিদ নির্মাণে সরকারকে অন্যত্র পাঁচ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের রায়ে বলা হয়, মসজিদের নিচে স্থাপনা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এটি মন্দির কি না, তা নিশ্চিত নয়।
২ দশমিক ৭৭ একর বিরোধপূর্ণ জমিতে মন্দিরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ট্রাস্ট গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই জমিতেই বাবরি মসজিদ ছিল।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা না হলে ঐ সময়কার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত দুই হাজার লোক নিহত না হলে আজকের এই রায় প্রকাশ হতো না। হিন্দুত্ববাদীত্বের কারণে ভারতে মসজিদ ভেঙ্গে সেখানে মন্দীন তৈরীর রায় হওয়াটাই স্বাভাবিক।
সূত্রঃ তথ্য সংগ্রহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে।
তারিখঃ নভেম্বর ০৯, ২০১৯
ছবিঃ ইনটারনেট থেকে
রেটিং করুনঃ ,