লেখক: অয়ন বিশ্বাস।
একাক্ষরা মন্ত্র ‘মা’। ‘মাদার’। সেবাপ্রতিমা, সকল দুঃখহারিণী। তিনি সেই মা। নীলপাড় সাদাশাড়ির নিতান্ত আটপৌরে মা। ত্যাগব্রতী সন্ন্যাসিনী। জন্মসূত্রে বিদেশিনী হয়েও সেবাকর্মসূত্রে আপাদমস্তক ভারতীয়, বিশেষত ‘ক্যালকাটান্’। বাংলাভাষাটা ভালোই আয়ত্ত করেছিলেন সনিষ্ঠ অধ্যবসায়ে। তার জোরেই প্রকাশ করতেন প্রচ্ছন্ন গৌরব : “আমি তো কলকাতারই!”
যিনি অকপটে অকাতরে ভালোবেসেছেন, ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। বলেছেন, ঈশ্বর যেমন আমাদের সকলকে ভালোবাসেন, আমরাও যেন তেমন করেই একে অন্যকে ভালোবাসতে পারি। পাঁজরে ঘা মেরেছে তাঁর মোক্ষম প্রশ্ন, “অন্যের বিচার করতে গেলে তাকে ভালোবাসবে কখন?”
দক্ষিণ-পূর্ব য়্যুরোপের যুগোস্লাভিয়ার স্কপিয়ে শহরে ১১০ বছর আগে জন্ম অ্যাগনিস গোনশা বোজাশিউ (Agnes Gonxha Bojaxhiu)-এর। দিনটি ২৫ আগস্ট ১৯১০। ‘সিস্টার’ উপাধি লাভ করেন ২৪ মার্চ ১৯৩১। কিন্তু তিনি তাঁর কর্মভূমি হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন প্রিয় কল্লোলিনী কলকাতাকে। ১৪ নং ক্রিক লেন-এ প্রথম শুরু করেন তিনি মিশনারিস্ অফ চ্যারিটি-র কর্মযজ্ঞ। এটাই তাঁর মানসকন্যা ‘নির্মল হৃদয়’-এর আঁতুড়ঘর।
এক সপ্তাহ আগেই এসেছে সেই আনন্দের খবর। নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিতা হতে চলেছেন মাদার। ২৪ অক্টোবর ১৯৭৯—কলকাতার রবীন্দ্র সদনের উদার প্রাঙ্গণে সেই উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনার উত্তরে তিনি বললেন, “কলকাতার মানুষজনের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। আমার কর্মজীবনের প্রথম দিন থেকেই তাঁরা আমাকে বন্ধু করে নিয়েছেন, আমাকে গ্রহণ করেছেন, ভালোবেসেছেন, বিশ্বাস করেছেন।”
প্রধানমন্ত্রী নেহরুজিই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদের কাছে মাদারের নাম ‘পদ্মশ্রী’-র জন্য সুপারিশ করেন। ১৯৬২ সালে তিনিই প্রথম শাড়ি-পরিহিতা শ্বেতাঙ্গিনী, যিনি এই সম্মান লাভ করেন। ১৯৮০-তে তাঁকে সর্বোচ্চ অসামরিক দেশীয় সম্মান ‘ভারতরত্ন’ প্রদান করা হয়। তিনিই প্রথম সেই কীর্তি স্থাপন করেন, তাঁর আগে যে-সুযোগ আর কোনও জন্মসূত্রে অ-ভারতীয় পাননি।
অথচ এই মহাজীবনের শুরুতে তাঁকেও তো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে। জনৈক ধর্মযাজক বলেছেন তাঁকে, “I knew this woman as novice. She could not light a candle in the chapel properly and you expect her to start a congregation?” এত বড় কথা যিনি বলেছেন, তিনি কল্পনাও করতে পারেননি, অতি সাধারণ বাঙালিনীর মতো শাড়ি পরিহিতা এই নারী একদিন পৃথিবীর ১২০ টি দেশে ১৬৯ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ১৩৬৯ টি ক্লিনিক নির্মাণ করবেন। মাথার উপর নিরাপদ ছাদ তৈরি ক’রে দেবেন ৭৫৫ টি বাড়ির বাসিন্দাকে। মাদার চ্যাপেলে সামান্য মোমের বাতি জ্বালতে পারেননি, তবে তিনি অগণিত আশাহত চোখে আশার আলো প্রজ্বলিত করেছেন। মাতৃস্নেহে ভরিয়ে তুলেছেন কত তাপিত, পীড়িতকে। কোল পেতে দিয়েছেন কত অসহায় অনাথ, আতুর মানুষকে!
চিরটাকাল তিনি কায়মনোবাক্যে অনুধাবন করেছেন—যাঁর সেবা তিনি করেছেন, স্নেহচ্ছায়ায় আগলে রাখতে চেয়েছেন যাঁকে, তিনিই তাঁর আরাধ্য দেবমানব—‘Christ in suffering’। তাঁর সমালোচকদের উদ্দেশ্যে বলতে চেয়েছেন, “আমাদের সদাপ্রভু যেন অনুরাগী ভক্তের পদযুগল ধুয়ে দিচ্ছেন। আমার সেবায় অন্য বড় কিছু হয়নি। কেবল এই কাজটুকু করতে চেয়েছি।”
আজ কেবল শিক্ষক দিবস নয়। আজকের দিনে, অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭—৮৭ বছর পূর্ণ হতেই, আমাদের ছেড়ে মাদার পাড়ি দিয়েছেন অমর্ত্যলোকে। আমাদের মাঝে রয়ে গেছে তাঁর সুমহান সেবা আর প্রাণপাত ক’রে আর্তজনকে ভালোবাসার পরমাদর্শ। আর চিরকাল বুকে করে রেখে দেওয়ার মতো একটি নাম—সন্ত মাদার টেরেসা।
তাঁর জীবন ও বাণীই যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে রবিঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’-র গানে—“যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন/ সেইখানে যে চরণ তোমার রাজে/ সবার পিছে, সবার নীচে, সবহারাদের মাঝে।।…”
আজ, ২৪ তম (১৯৯৭-২০২১) মহাপ্রয়াণ-বার্ষিকীতে সেই সেবাপ্রতিমা বিশ্বজননীর পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্যে অন্তরের প্রণতি নিবেদন করি।
লেখক: অয়ন বিশ্বাস
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মেরি টেরিজা বোজাঝিউ[১] (জন্ম: অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ; আলবেনীয়: [aˈɲɛzə ˈɡɔndʒɛ bɔjaˈdʒiu];২৬ আগস্ট , ১৯১০ –৫ সেপ্টেম্বর , ১৯৯৭), যিনি মাদার[ক] টেরিজা বা তেরেসা[খ]নামে অধিক পরিচিত, ছিলেন একজন আলবেনীয়-বংশোদ্ভুত[২][৩] ভারতীয়[৪] ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী এবং ধর্মপ্রচারক। টেরিজার জন্মস্থান অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়ে।[গ][১] আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাটান। ১৯২৮ সালে তিনি আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার অভিযানে আসেন। জীবনের বাকি অংশ তিনি ভারতেই থেকে যান।
১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ) নামে একটি খ্রিস্ট ধর্মপ্রচারণাসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে এই সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন ৪৫০০ সন্ন্যাসিনী। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই ধর্মপ্রচারণা কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে ‘সন্ত’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং ক্যাথলিক গির্জায় তিনি ‘কলকাতার সন্ত টেরিজা’ হিসেবে আখ্যায়িত হন।[৫][৬]
১৯৬৯ সালে বিবিসিতে সামথিং বিউটিফুল ফর গড শিরোনামে ম্যালকম মাগারিজের প্রামাণ্য তথ্যচিত্র প্রচারিত হলে তার দাতব্য ধর্মপ্রচারণাসংঘের কার্যক্রম পশ্চিমা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং টেরিজার খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে।[৭][৮] তিনি ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার[৯] ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন। টেরিজার মৃত্যুর সময় বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে মৃত্যুপথ যাত্রী এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা রোগীদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয়সহ দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র বিদ্যমান ছিল।
মেরি টেরিজা বোজাঝিউ একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব; মৃত্যুর আগে ও পরে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও একাধিক রাষ্ট্রের সরকার দ্বারা নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছেন। জার্মেইন গ্রিয়ার টেরিজাকে ‘ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী’ হিসেবে সমালোচনা করেছেন।[১০][১১] ক্রিস্টোফার হিচেন্স, মাইকেল প্যারেন্টি, অরূপ চট্টোপাধ্যায়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি ব্যক্তি ও সংস্থা জন্মনিরোধক এবং গর্ভপাতের বিষয়ে তার আপত্তি, দারিদ্র্যের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্যে তার বিশ্বাস ও মৃত্যুপথযাত্রীদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার সমালোচনা করেন। বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নালে তার প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার নিম্নমানের সমালোচনা করা হয় এবং দানের অর্থের অস্বচ্ছ ব্যয়ের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
প্রাথমিক জীবন
অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ আলবেনীয় ভাষায় গঞ্জা শব্দের অর্থ গোলাপকুঁড়ি) ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইউস্কুবে (অধুনা ম্যাসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্রের রাজধানী স্কোপিয়ে) জন্মগ্রহণ করেন। তবে ২৬ আগস্ট জন্ম হলেও তিনি ২৭ আগস্ট তারিখটিকে তার “প্রকৃত জন্মদিন” মনে করতেন; কারণ ওই তারিখেই তার বাপ্তিস্ম সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি ছিলেন নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান। তাদের আদি নিবাস ছিল আলবেনিয়ার শ্কড্যর্ অঞ্চলে। তার পিতা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে মাত্র আট বছর বয়সে তার পিতৃবিয়োগ হয়। পিতার মৃত্যুর পর তার মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। জোয়ান গ্র্যাফ ক্লুকাস রচিত জীবনী থেকে জানা যায়, ছোট্টো অ্যাগনেস ধর্মপ্রচারকদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে বড়োই ভালবাসতেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় সন্ন্যাস জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায়। মা আর দিদিদের সঙ্গে আর তার কোনোদিন দেখা হয়নি।
অ্যাগনেস প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লোরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করতে যান। কারণ এই ভাষাই ছিল ভারতে সিস্টার্স অফ লোরেটোর শিক্ষার মাধ্যম। ১৯২৯ সালে ভারতে এসে দার্জিলিঙে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন।[১৭] ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি ধর্মপ্রচারকদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত Thérèse de Lisieux –এর নামানুসারে টেরিজা নাম গ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালের ১৪ মে পূর্ব কলকাতায় একটি লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময় তিনি চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন।
স্কুলে পড়াতে তার ভাল লাগলেও কলকাতার দারিদ্র্যে তিনি উত্তরোত্তর উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে লাগলেন।[২১] পঞ্চাশের মন্বন্তরে শহরে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ আর মৃত্যু; ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গাতেও বহু মানুষ মারা যান। এই সব ঘটনা টেরিজার মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।
১৯৪৮ সালে এই মোতাবেক দরিদ্রের মাঝে ধর্মপ্রচার কাজ শুরু করেন। প্রথাগত লোরেটো অভ্যাস ত্যাগ করেন। পোশাক হিসেবে পরিধান করেন নীল পারের একটি সাধারণ সাদা সুতির বস্ত্র। এ সময়ই ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন। প্রথমে মতিঝিলে একটি ছোট স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে ক্ষুধার্ত ও নিঃস্বদের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেন। তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে থাকেন। তার এই কার্যক্রম অচিরেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের নজরে আসে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও তার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
১৯৫০ সালের ৭ই অক্টোবর তেরেসা “ডায়োসিসান ধর্মপ্রচারকদের সংঘ” (বিশপের এলাকার মত সমাবেশ) করার জন্য ভ্যাটিকানের অনুমতি লাভ করেন। এ সমাবেশই পরবর্তীতে মিশনারিস অফ চ্যারিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
কলকাতায় মাত্র ১৩ জন সদস্যের ছোট্ট অর্ডার হিসেবে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর অধীনে ৪,০০০ এরও বেশি সন্ন্যাসিনী কাজ করছেন। চ্যারিটির অধীনে এতিমখানা ও এইড্স আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র্য, বসতিহীন এবং বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় চ্যারিটির সবাই অক্লান্ত পরীশ্রম করে যাচ্ছেন।
১৯৫২ সালে মাদার তেরেসা কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে কালিঘাট হোম ফর দ্য ডাইং-এ রূপান্তরিত করেন। এটি ছিল দরিদ্র্যদের জন্য নির্মীত দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখেন নির্মল হৃদয়। এই কেন্দ্রে যারা আশ্রয়ের জন্য আসতেন তাদেরকে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হতো এবং সম্মানের সাথে মৃত্যুবরণের সুযোগ করে দেয়া হয়। এ বিষয় তেরেসা বলেন, “A beautiful death is for people who lived like animals to die like angels — loved and wanted.” এর কিছুদিনের মধ্যেই তেরেসা হ্যানসেন রোগে (সাধারণ্যে কুষ্ঠরোগ নামে পরিচিত) আক্রান্তদের জন্য একটি সেবা কেন্দ্র খোলেন যার নাম দেয়া হয় শান্তি নগর। এছাড়া মিশনারিস অফ চ্যারিটির উদ্যোগে কলকাতার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কিছু কুষ্ঠরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই কেন্দ্রগুলোতে ঔষধ, ব্যান্ডেজ ও খাদ্য সুবিধা দেয়া হয়।
সংঘের শিশুদের লালন-পালন করতো। এক সময় শিশুর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় তেরেসা তাদের জন্য একটি আলাদা হোম তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই অনুভূতি থেকেই ১৯৫৫ সালে নির্মল শিশু ভবন স্থাপন করেন। এই ভবন ছিল এতিম ও বসতিহীন শিশুদের জন্য এক ধরনের স্বর্গ।
অচিরেই মিশনারিস অফ চ্যারিটি দেশ-বিদেশের বহু দাতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। এর ফলে অনেক অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। ১৯৬০-এর দশকের মধ্যে ভারতের সর্বত্র চ্যারিটির অর্থায়ন ও পরিচালনায় প্রচুর দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, এতিমখানা ও আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের বাইরে এর প্রথম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে ভেনিজুয়েলায়। মাত্র ৫ জন সন্ন্যাসিনীকে নিয়ে সে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৮ সালে রোম, তানজানিয়া এবং অস্ট্রিয়াতে শাখা খোলা হয়। ১৯৭০-এর দশকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েক ডজন দেশে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সাথে অবশ্য তার দর্শন ও প্রায়োগিক দিক নিয়ে কিছু সমালোচনাও হয়। মাদার তেরেসার বিরুদ্ধে সমালোচকরা খুব কম তথ্যই হাজির করতে পেরেছিলেন। একথা স্বীকার করে নিয়েই ডেভিড স্কট বলেন, “মাদার তেরেসা স্বয়ং দারিদ্র্য বিমোচনের বদলে ব্যক্তি মানুষকে জীবিত রাখার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।” এছাড়া কষ্টভোগ বিষয়ে তার মনোভাবও সমালোচিত হয়েছে। অ্যালবার্টার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “তিনি মনে করতেন, কষ্টভোগের মাধ্যমে যীশুর কাছাকাছি যাওয়া যায়।” এছাড়া ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ও দ্য ল্যান্সেট পত্রিকায় তার সেবা কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকেই এক হাইপোডার্মিক সূচ একাধিক বার ব্যবহারের কথা বলেছেন। কেন্দ্রগুলোর জীবনযাত্রার নিম্নমানও সমালোচিত হয়েছে। তার উপর সংঘের অ-বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পদ্ধতিগত রোগ-নিরূপণকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিল
সূত্র: উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ।
তারিখ: সেপ্টম্বর ০৫, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,