Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

অনিশ্চিত ভবিষতের দিকে অনেক মানুষের যাত্রা এই কারোনা কালে ( ২০২১)

Share on Facebook

মোস্তাফিজুর রহমানের মাথায় চক্কর দেয়। তাঁর মাথা ফাঁকা হয়ে আসে। ইদানীং শরীরের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ আগের মতো নেই। হাঁটার সময় বারবার মনে হয় তিনি পড়ে যাবেন। পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নেন তিনি। অথচ তাঁর বয়স মাত্র ৩৫ বছর। এটি মাথা ঘুরে পড়ার বয়স না।

মোস্তাফিজের শরীরে কোনো রোগব্যাধি নেই। করোনাভাইরাসে তিনি আক্রান্তও হননি। কিন্তু তাঁর এই অবস্থার জন্য এই আণুবীক্ষণিক জীবটিই দায়ী। কারণ, করোনা তাঁকে এই এক বছরে প্রায় আক্ষরিক অর্থে ‘ভিখারি’ করে ফেলেছে। ভিক্ষুকেরা চেয়েচিন্তে চলে। সেই চলাকে তারা পেশার মর্যাদা দেয়। এ কারণে চেয়েচিন্তে চলার মধ্যে তারা লজ্জার কিছু খুঁজে পায় না। কিন্তু মোস্তাফিজকে এখন যেভাবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের কাছে চেয়েচিন্তে চলতে হচ্ছে, তার মধ্যে সীমাহীন লজ্জা রয়েছে। সেই লজ্জা মাঝেমধ্যে তাঁকে ‘চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে’ ‘অশ্বত্থের কাছে একগাছা দড়ি হাতে’ যেতে উসকানি দেয়। শিশুপুত্রের ছবি তাঁকে আবার জীবনে ফিরিয়ে আনে।

মোস্তাফিজের পেটে করোনার লাথি পড়েছে গত বছরের অক্টোবরে। তিনি একটি পোশাক কারখানায় আইটি বিভাগে চাকরি করতেন। করোনার কারণে কারখানার কাজ কমতে থাকল। একপর্যায়ে কোম্পানি তাঁকে বিনয়ের সঙ্গে বলে দিল ‘চাকরি নাই’।
মোস্তাফিজের অফিস ছিল নারায়ণগঞ্জে। হাজার তিরিশেক টাকা বেতন পেতেন। স্ত্রী এবং আট মাস বয়সী পুত্রকে নিয়ে ফতুল্লায় নয় হাজার টাকায় তিন রুমের একটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন। ছুটির দিন স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন; রেস্টুরেন্টে ভালোমন্দ খেতেন। বেতনকড়ি নিয়মিত পাওয়া যেত বলে বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বেশ কিছু আসবাবপত্র কিনেছিলেন। এ ছাড়া টুকটাক বাজারসদাই কিংবা রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়ার জন্য একটা ক্রেডিট কার্ডও ছিল। সব চলছিল ঠিকমতো। আচমকা সব ওলট-পালট হয়ে গেছে।

নিজেদের খাওয়া-পরার চেয়ে জরুরি যে খরচ, তা হলো বাচ্চার কৌটাজাত দুধ। মাসে পাঁচটি মাঝারি আকারের দুধের কৌটা লাগে। তাতে খরচ প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। বাড়িভাড়া, ব্যাংকের ঋণ আর ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি পরিশোধ না করে কোনো উপায় নেই।

চাকরি যাওয়ার পর হন্যে হয়ে নতুন চাকরি খুঁজছিলেন মোস্তাফিজ। কিন্তু সবখানেই একই গল্প শুনতে হয়েছে, ‘বুঝতেই তো পারছ, কী অবস্থা যাচ্ছে, পরিস্থিতি ভালো হোক, তারপর এসো, তখন দেখব।’

প্রথম দুই মাসেই যা কিছু সঞ্চয় ছিল, তার সব শেষ হয়ে গিয়েছিল মোস্তাফিজের। শুরু হলো ধার চাওয়ার পালা। কিন্তু যাঁদের কাছে তিনি ধার চাইতে লাগলেন, তাঁদের বেশির ভাগই সরকারি চাকরি করেন না। হয় ব্যবসা, নয়তো বেসরকারি চাকরি করেন। তাই করোনায় তাঁদের অবস্থাও ভালো না। ফলে ধার তিনি পান, কিন্তু দশ হাজার টাকা চাইলে বড়জোর দুই হাজার।

তিন মাসের মাথায় মোস্তাফিজ বুঝলেন, এভাবে আর সম্ভব হবে না। তাঁকে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দিতেই হবে। প্রশ্ন হলো, তিনি যাবেন কোথায়। খুলনায় দেশের বাড়ি বলতে যে ভিটে আছে, সেখানে অন্য ভাইয়েরা থাকেন। তাঁর পরিবার গিয়ে ট্রাকভর্তি মালপত্র নিয়ে সেখানে থাকবে, এমন কোনো ঘর সে ভিটেতে নেই।

মোস্তাফিজের শ্বশুর-শাশুড়ি দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। সেখানে বউ ও সন্তানকে হয়তো পাঠিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু ফতুল্লার বাসার এত আসবাবপত্র তো সেখানে রাখা সম্ভব না। তাই শ্বশুরের বাসার পাশে চার হাজার টাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে ফতুল্লা থেকে মালপত্র নিয়ে তোলেন মোস্তাফিজ। বউ তাঁর বাপের বাড়িতে বাচ্চাসহ উঠল। সেখানে তাঁদের তুলে দিয়েই তাঁকে ঢাকায় ফেরত আসতে হয়ে মোস্তাফিজকে। তাঁকে চাকরি একটা খুঁজে বের করতেই হবে। ঢাকায় তাঁর এক বোন থাকেন। সেখানে আপাতত আশ্রয় নেন তিনি। ব্যাংকের কিস্তির টাকা, কুষ্টিয়ায় পরিবারের খরচাপাতি, শিশুপুত্রের দুধের খরচ—এসব মাথায় নিয়ে তিনি চাকরি খুঁজতে থাকেন। একের পর এক মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে ফোন সেট গরম হয়ে যায়। সবখানে ‘নো ভ্যাকান্সি’। ওপাশে টাকার জন্য স্ত্রীর তাড়া, কিস্তির জন্য ব্যাংকের তাড়া, ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালার তাড়া। মোস্তাফিজের মাথা ঘুরতেই থাকে।

অবশেষে গত জানুয়ারিতে মোস্তাফিজ ছোট্ট একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে যান। বেতন ১৮ হাজার টাকা। এই টাকায় চলবে না জেনেও চাকরিটা পেয়ে তিনি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। বোনের বাসায় থাকার সুবাদে ঢাকায় থাকার খরচ লাগছিল না। মাস শেষে যা পাওয়া যাচ্ছিল, তা দিয়ে কোনোমতে আবার সব গুছিয়ে আনা যাচ্ছিল।

লাটাইয়ে উল্টোভাবে সুতা প্যাঁচালে তা আগের জায়গায় আনতে আগে সুতা ছাড়তে হয়। সুতো জিরো অবস্থানে আসার পর আবার লাটাই ‘সিধাভাবে’ গুটাতে হয়। মোস্তাফিজের জীবিকা নামক লাটাইয়ের উল্টোভাবে প্যাঁচানো সুতা নতুন চাকরিটার সুবাদে সবে জিরো অবস্থানে আসছিল। সবে নতুন করে লাটাইটা সদরভাবে ঘুরাতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু এর মধ্যেই লকডাউন নামের প্রবল দমকা বাতাস এল। সুতাটাই ছিঁড়ে গেল। মোস্তাফিজ যে ছোট প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি করছিলেন, তাঁরা জানিয়ে দিল, তাঁকে আর অফিসে যেতে হবে না।

মোস্তাফিজ এই লেখার কোনো কাল্পনিক চরিত্র নয়। এই লেখকের অতি পরিচিত মুখ সে। ভব্যতার দায়ে শুধু তাঁর নামটাকে ছদ্মনামে বদলানো হয়েছে। দেশে এই মুহূর্তে কতজন মোস্তাফিজের মাথায় করোনার কবলে চক্কর খাচ্ছে তার খবর জানি না। আমি শুধু একজন মোস্তাফিজের কথা, তাঁর মাথা ঘুরানির কথাই জানি।

এখন রমজান মাস। খালি পেটে বিকেলের দিকে অনেক রোজাদারের মাথা ঘোরে। কিন্তু মোস্তাফিজের মাথা সকাল-দুপুর চক্কর দিচ্ছে। কারণ, বেসরকারি খাতের কাজ থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে কাজের খোঁজে খাঁ খাঁ পথে হাঁটতে হাঁটতে মোস্তাফিজ টের পাচ্ছেন, দুধ কেনার টাকা কুষ্টিয়ায় পাঠাতে না পারলে তাঁর শিশুপুত্রকেও রোজা রাখতে হবে।

লেখক: সারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ১৮, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ